বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মার্জিন ঋণ নিয়ে আদেশের পর সূচক বাড়লেও লেনদেনে খরা

  •    
  • ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৪:৫১

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে দূরত্বের কারণে বহু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বসে আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে অর্থবছর শেষের বিক্রয় চাপ আছেই।

লভ্যাংশের কারণে কোম্পানির শ্রেণি উন্নত হলে মার্জিন ঋণ মিলবে- নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এমন নির্দেশনা জারির তিন কর্মদিবস পর সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে। তবে লেনদেন কমে গেছে আরও।

আগের দিন ৭২ পয়েন্ট সূচক পতনের স্মৃতি নিয়ে সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সকালে লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। সাড়ে চার ঘণ্টার কোনো একটি সময়ও সূচক কমে লেনদেন হয়নি।

তবে বেলা ১১টা ৩ মিনিটে আগের দিনের তুলনায় সূচক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হলেও দিন শেষে সেই অবস্থান ধরে রাখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।

গত ৭ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিকে নিয়ে বৈঠকের পর ১৩ কর্মদিবসে সূচক পড়েছে ১০ দিন। বাকি তিন দিন বেড়েছে সামান্যই।

সেই বৈঠকে জানানো হয়, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আবার বৈঠকে বসলে একটি ঘোষণা আসবে। তবে ডিসেম্বরে এই বৈঠক আর হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও হবে কি না, তা নিয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলছে না।

এক বছরেরও বেশি সময় চাঙাভাবের পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে যে দরপতন শুরু হয়, তার মধ্যে বাজার নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতভিন্নতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের চিত্র

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের যে বিনিয়োগসীমা, সেটি শেয়ারের ক্রয়মূল্যে নাকি বাজারমূল্যে বিবেচনা হবে, বন্ডে বিনিয়োগ এই সীমার ভেতরে থাকবে, নাকি বাইরে থাকবে- এ বিষয়ে একমত হতে পারছে না দুই পক্ষ। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি ব্যাংকগুলোকে পারপেচুয়াল বন্ড ছেড়ে মূলধন বাড়ানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তা দিয়ে ব্যাসেল-থ্রি এর শর্ত পূরণ করা যাবে না।

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে এই দূরত্বের কারণে বহু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বসে আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে অর্থবছর শেষের বিক্রয় চাপ আছেই।

তিন কর্মদিবস পর সূচকে পয়েন্ট যোগ হলেও লেনদেনে খরা কাটেনি, বরং আগের দিন যে পরিমাণ লেনদেন হয়েছিল, তার চেয়ে দেড় শ কোটি টাকার কম শেয়ার হাতবদল হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি রয়ে গেছে।

হাতবদল হয়েছে ৭৪৫ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৮৮৫ কোটি ৬১ লাখ ৩৭ লাখ টাকা।

সেই পাঁচ কোম্পানির কী চিত্র

আগের দিন বিএসইসি এক আদেশে জানায়, জেড ক্যাটাগরির কোনো কোম্পানি যদি ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে উচ্চতর ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়, তাহলে সে কোম্পানির বিপরীতে ঋণসুবিধা দেয়া যাবে।

এত দিন ক্যাটাগরি পাল্টালে ৩০ কর্মদিবস ঋণ পাওয়া যেত না, এখন থেকে পাওয়া যাবে ৭ কর্মদিবস পড়েই।

কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ না দিলে বা ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে এলে সেটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হয়। যেসব কোম্পানি ১ থেকে ৯ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, যেগুলো নতুন তালিকাভুক্ত হয়, সেগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে এবং যেগুলো কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হয়।

সূচক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে এই ১০ কোম্পানি

বিএসইসির এই আদেশের পর গত জুনে লভ্যাংশ ঘোষণা করা পাঁচ কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে। এর মধ্যে বেক্সিমকো ছাড়া বাকিগুলোর অবশ্য সূচকে প্রভাব নেই তেমন। বাকি এই কোম্পানিগুলো হলো বিকন ফার্মা, ভিএসএফ থ্রেডও, ম্যাকসন্স স্পিনিং ও তওফিকা ফুডস।

এর মধ্যে চারটি কোম্পানি ‘বি’ শ্রেণি থেকে ‘এ’ শ্রেণিতে উন্নীত হবে। আর তওফিকা ‘এন’ থেকে আসবে ‘এ’তে।

এর মধ্যে বেক্সিমকোর শেয়ারদর বেড়েছে ৩ টাকা ৪০ পয়সা। কয়েক দিন পর লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে কোম্পানিটি।

অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে তওফিকা ফুডসের শেয়ারদর ১০ পয়সা কমেছে, ভিএসএফ ফ্রেডের বেড়েছে ৩০ পয়সা, ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের বেড়েছে ৫০ পয়সা। সর্বোচ্চ ৭ টাকা ৮০ পয়সা বেড়েছে বিকন ফার্মার।

সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় যেসব কোম্পানি

সূচকে সবচেয়ে বেশি ৭.৮৭ পয়েন্ট যোগ করেছে স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১.৭৪ শতাংশ।

দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমেটেড। ২.৩ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ৭.১৫ পয়েন্ট।

রবি, ম্যারিকো, ইউনাইটেড পাওয়ার, আইসিবি, ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকও সূচকে বেশ ভালো পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ৩৪.৩৩ পয়েন্ট।

এই ১০ কোম্পানি সূচক নিচের দিকে টানার চেষ্টা করেছে

অন্যদিকে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো সূচক নিচের দিকে টেনে ধরার চেষ্টা করেছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর ০.৫৪ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ৪.৩৪ পয়েন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.১৪ পয়েন্ট সূচক ফেলেছে ওয়ালটন। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ০.৫০ শতাংশ।

অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে লাফার্জ হোলসিম, গ্রামীণ ফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, এনবিএল, ব্যাংক এশিয়া, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও ট্রাস্ট ব্যাংকও সূচক নিচের দিকে টেনে ধরেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক ফেলেছে ২০.৩৬ পয়েন্ট।

সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে যে ১০ কোম্পানি

সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের। এর আগে তিন কর্মদিবস শেয়ার দর কমেছিল শেয়ারের। ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকার ১৩ লাখ ৯১ হাজার ১৭১টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাষ্ট্রায়াত্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯১ শতাংশ। ৫৫ টাকা ৫০ পয়সা দরের শেয়ার পৌঁছেছে ৬১ টাকায়।

বেশ কিছুদিন পর লেনদেনের শীর্ষে উঠে এল বিবিধ খাত

তৃতীয় অবস্থানে থাকা আরেক সরকারি কোম্পানি এটলাস বাংলাদেশের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৮৩ শতাংশ।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৭.৩০ শতাংশ। ২৬ টাকার শেয়ার বেড়ে হয়েছে ২৭ টাকা ৯০ পয়সা। ৩১ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৯টি শেয়ার।

পঞ্চম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমের দর বেড়েছে ৬.৭৯ শতাংশ।

এছাড়া অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর যার ১৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৬.৭১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা ৯০ পয়সা। ওরিয়ান ফার্মার দর যার ৫.৮৯ শতাংশ, জেনারেশন নেক্সেটের দর ৫.৪৫ শতাংশ এবং বিডি ফাইনান্সের দর বেড়েছে ৪.৮৯ শতাংশ।

আরও তিনটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, ১৩টি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ২৯টি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ৬৪টি কোম্পানির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।

দর হারানোর শীর্ষ ১০

পতনের সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। ৬.৩৫ শতাংশ কমে ৮৯ টাকা ৭০ পয়সা দরের শেয়ার নেমে এসেছে ৮৪ টাকায়।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর কমেছে ৪.৭৩ শতাংশ। ১৪ টাকা ৮০ পয়সা দরের শেয়ার নেমে এসেছে ১৪ টাকা ১০ পয়সায়।

মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের দর কমেছে ৪.১২ শতাংশ। গত তিন কর্মদিবস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে কোম্পানিটির দর।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা আমান কটন ফেব্রিক্সের দর কমেছে ৪.০৮ শতাংশ। ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

পঞ্চম অবস্থা থাকা এএমসিএল (প্রাণ) এর দর কমেছে ৩.৮৫ শতাংশ।

সূচক বাড়ার দিন কেবল বিমা খাতে গেছে খারাপ দিন

এছাড়া প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৮৩ শতাংশ, প্রগতি লাইফের দর ৩.৭৫ শতাংশ, জিমিনি সি ফুডের দর ৩.৫৭ শতাংশ, এপেক্স ফুডের দর ৩.৪২ শতাংশ, ঢাক্কা ডাইংয়ের দর ৩ শতাংশ দর কমেছে।

এছাড়া দুই শতাংশ থেকে দুই শতাংশের বেশি শেয়ার দর হারিয়েছে এমন কোম্পানি ছিল ২১টি। আর এক শতাংশ থেকে এক শতাংশের বেশি শেয়ার দর হারিয়েছে এমন কোম্পানি ছিল ৪৫টি।

সবচেয়ে বেশি লেনদেন যে ১০ কোম্পানি

এদিন লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বিবিধ খাত। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল আগের দিন শীর্ষে থাকা বিমা খাত। তৃতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত এবং চতুর্থ অবস্থানে ব্যাংক।

এর মধ্যে একশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কেবল দুটি খাতে।

একক কোম্পানি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডে। ৪৫ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, যার ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ৮৯ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

এছাড়া এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ২৮ কোটি ১৫ লাখ টাকায় ২২ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৪টি শেয়ার, জেনেক্স ইনফোসিসের ২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৯ টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

দশ কোটি থেকে বিশ কোটি পর্যন্ত শেয়ার লেনদেন হয়েছে এমন কোম্পানি ছিল আটটি। এর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৭টি শেয়ার।

ওয়ান ব্যাংকের ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ১ কোটি ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ২০০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

বিকন ফার্মায় ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, সোনালী পেপারে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকে ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ফরচুন সুজে ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোতে ১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর