আবার নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিল বিএনপি। দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপে আগেও দুটি কমিশন গঠন হয়েছে। কিন্তু তারা ভালো নির্বাচন করতে পারেনি।
বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা- জাসাসের নবগঠিত কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর এ কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করছেন, তার উদ্দেশ্যই হচ্ছে আর একটি হুদা (কে এম নুরুল হুদা) মার্কা নির্বাচন, আর একটি রকিব (রকিবউদ্দিন আহমেদ) মার্কা নির্বাচন, বিনা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা।’
২০১৩ সালে রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এবং ২০১৮ সালে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি সংলাপের যে উদ্যোগ নেন, তাতে যোগ দিয়েছিল বিএনপি। তবে এই দুই কমিশনের অধীনে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলটির প্রবল আপত্তি আছে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। আর নতুন যে কমিশন গঠন হবে, সেটিই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে। আর এই কমিশন গঠনে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে তৃতীয়বারের মতো সংলাপের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি প্রথম দিন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বসার দিন রিজভী এই উদ্যোগকে ‘বায়োস্কোপ’ বলে কটাক্ষ করেন। দুদিন পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা সংলাপে যোগ দেয়ার চিঠি পাননি। পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে গত ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির এক সমাবেশে তিনি বলেন, সংলাপকে ‘সং’-এর আলাপ বলে আবার কটাক্ষ করেন। ‘সং’ মাসে ‘জোকার’- এই বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংলাপের কথা বলেন, কীসের সংলাপ? কী নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন? এই নির্বাচন কমিশন তো আপনারাই গঠন করেছিলেন। যার প্রতিফলন দেখছি, জনপদের পর জনপদ, বিভিন্ন ইউনিয়নে রক্ত ঝরছে। গতকালও তিনজন নিহত হয়েছে। এই হচ্ছে তাদের চালচিত্র।’
স্থানীয় সরকারের তৃণমূলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে ক্ষমতার লোভে এতটাই মত্ত, বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য ভোটার ছাড়া তারা নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করছে। বিদায়বেলায়ও হুদা নির্বাচন কমিশন যে দৃষ্টান্ত দেখাল, সেখানেও রক্ত এবং মানুষের লাশ।’
বিএনপি আন্দোলনে যাবে- এমন ইঙ্গিতও দেন রিজভী। বলেন, ‘এ দেশের জনগণ আর তাকিয়ে দেখবে না। হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এ দেশের সব নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠন, আজকে রুখে দাঁড়িয়েছে। তাদের কণ্ঠের প্রদীপ্ত আওয়াজে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার জানিয়েছে।’
জাসাস নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রের যিনি প্রতীক তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
‘আর দেশে যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কথা বলতে ভয় লাগে, চলাচল করতে ভয় লাগে, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকে নির্ভয়ে সুস্থ বাতাস প্রবাহিত করার জন্য এই সরকারের পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, নিরপেক্ষ লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার আসবে, সেই সরকারকে সবাই সমর্থন করবে। সেই ব্যবস্থার সংগ্রামে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, জাসাসের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ইথুন বাবু, আনিসুর রহমান সানি, লিয়াকত আলী, মো. আহসান উল্লাহ চৌধুরীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৬ নভেম্বর চিত্রনায়ক হেলাল খানকে আহ্বায়ক ও জাকির হোসেনকে সদস্যসচিব করে জাসাসের ৭১ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়।