পিরোজপুরের পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরটি গড়ে উঠেছে কচা নদীর কোলঘেঁষে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যবন্দরের কাছেই রয়েছে মাছ শুকানোর স্থান। এটি পরিচিত শুঁটকিপল্লি নামে।
প্রতিবছর শীত মৌসুমে জেলার চিথলিয়া ও পাড়েরহাট গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা এ শুঁটকিপল্লিতে মাছ শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করেন স্থানীয় জেলেরা। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভিজে গেছে কয়েক লাখ টাকার শুঁটকি।
এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার কারণে গত বছর এমনিতে শুঁটকিতে লোকসান হয়েছে। এবার সেটি পুষিয়ে নেয়ার আশা ছিল তাদের। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে তাদের সেই আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। শুঁটকি নষ্ট হওয়ায় অনেকে ঠিকমতো শ্রমিকদের বেতনও দেননি।
স্থানীয়রা জানান, ১২ বছর ধরে কার্তিক থেকে প্রায় সাড়ে ৫ মাস এখানে চলে শুঁটকির ব্যবসা। পাওয়া যায় ফাইস্যা, লইট্যা, চিতলসহ প্রায় ৩৬ ধরনের মাছের শুঁটকি। এখান থেকেই বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মাছ ঢাকা, সৈয়দপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয় এখানকার শুঁটকি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজান হোসেন ও খলিল জানান, এ পল্লিতে লইট্টা, ট্যাংরাসহ ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের মাছের শুঁটকি করা হয়। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কয়েক দিন বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে কয়েক লাখ টাকার শুঁটকি। এ কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা তাদের।
এ বছর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে কয়েক লাখ টাকার শুঁটকি। ছবি: নিউজবাংলা
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তারা।
শুঁটকিপল্লির শ্রমিক বিল্লাল মোল্লা জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া মাছের বড় অংশই শুকাতে পারেননি। তাই এ বছর শুঁটকি ব্যবসায় লোকসানে আছেন মালিকরা। সেই অজুহাতে ঠিকমতো তাদের বেতনও দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে এখানে আরও বেশি শুঁটকি উৎপাদন এবং মুনাফা করা সম্ভব বলে মনে করেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। সরকারি খাসজমি পেলে এখানকার শিল্পকে আরও বড় করা সম্ভব বলে জানান তারা।
এখানকার শুঁটকি শিল্পের উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, পিরোজপুরের উন্নতমানের শুঁটকি দেশ থেকে শুরু করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় গড়ে ওঠা শুঁটকিপল্লি থেকে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি হয়ে থাকে। এগুলো চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।