বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাড়ে ৫ মাসেই ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ২২:১৪

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের অঙ্ক বেসরকারি খাতের জন্য কোনো নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনেনি। কিন্তু চলমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আর সরকার যদি ব্যাংক থেকে এভাবে ব্যাপক হারে ঋণ নিতে থাকে, তাহলে তা বিদ্যমান তারল্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তাই এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সরকারের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।'

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণগ্রহণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরের সাড়ে পাঁচ মাসে (১ জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর) ২০ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি।

গত বছরের এই সাড়ে পাঁচ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৬ হাজার ৫১১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার।

অর্থনীতির গবেষক আহসান মনসুর বলেছেন, ‘করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি; সব সূচকই এখন ইতিবাচক। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও বেশ গতি এসেছে। ফলে বেড়ে গেছে সরকারের খরচ।

‘অন্যদিকে কড়াকড়ি আরোপ ও সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। আর এ কারণেই বাধ্য হয়ে সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংক ঋণ।’

গত অর্থবছরের পুরো সময়ে (২০২০-এর জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক থেকে ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের পুরো সময়ের ৭৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণ সাড়ে পাঁচ মাসেই নিয়ে ফেলেছে সরকার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের অঙ্ক বেসরকারি খাতের জন্য কোনো নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনেনি। কিন্তু চলমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আর সরকার যদি ব্যাংক থেকে এভাবে ব্যাপক হারে ঋণ নিতে থাকে, তাহলে তা বিদ্যমান তারল্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তাই এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সরকারের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।'

বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বল্পসুদের বিদেশি ঋণের সংস্থান করতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, 'ব্যয় মেটাতে বিদেশি ঋণ ও সহায়তা সরকারকে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এদিকেই এখন সরকারের বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রায় দুই বছরের করোনা মহামারি স্বাভাবিক হয়ে আসায় বেসরকারি খাত চাঙ্গা হচ্ছে। তার প্রমাণ শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ সময়ে যদি বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ না পায়, তাহলে কিন্তু বিনিয়োগ বাড়বে না; অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে সচল হবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাক্ষিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকার প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ২০ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়লেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের এই সাড়ে পাঁচ মাসে ৬ হাজার ৫১১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য ধরা আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার চাহিদা ছিল বেশ কম। শুরুর দিকে সরকার ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, পরিশোধ করেছিল তার চেয়ে বেশি। তবে শেষ দিকে গিয়ে নিট ঋণ দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে রেকর্ড ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নিয়েছিল সরকার।

মূলত চলতি ডিসেম্বর থেকেই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে সরকার। তার আগ পর্যন্ত খুব বেশি ঋণ নেয়নি সরকার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। এ সময়ে এনবিআরকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা আদায়ের জন্য বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির চার মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। তাতে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৯ হাজার ৩২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে এই চার মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ কমেছে ৬৬ শতাংশ।

সর্বশেষ অক্টোবর মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এটি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৪২৬ শতাংশ কম। গত বছরের অক্টোবরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দিয়েছে সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর