তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার থাকা তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা বলে মন্তব্য করেছেন আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার দুপুরে বাংলাদেশে অবৈধ সিগারেট বিক্রি ও উৎপাদনের মাত্রা বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশকালে ড. রুমানা এমন মন্তব্য করেন। একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য বিশেষজ্ঞরাও।
যুক্তরাজ্যের গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেস রিসার্চ ফান্ডের টোব্যাকো কন্ট্রোল ক্যাপাসিটি প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধানে এই সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। বিশেষজ্ঞ আলোচক ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. নুরুল আমিন ও সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি আফেয়ার্সের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন।
অধ্যাপক রুমানা হক তার প্রবন্ধে বলেন, ‘গবেষণায় অংশগ্রহণ করা অধিকাংশ মানুষ মনে করে যে তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার থাকা তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যতীত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আর্টিকেল ৫ দশমিক ৩-এর ব্যাপারে জ্ঞান একেবারেই সীমিত।’
অনুষ্ঠানে আরেকটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং আর্ক ফাউন্ডেশনের গবেষক এস এম আব্দুল্লাহ।
এই গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের খুচরা দোকানগুলোতে যে পরিমাণে সিগারেট বিক্রি হয় তার প্রায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ কোনও না কোনওভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সিগারেট প্যাক সম্পর্কিত আইন বিবেচনায় না নিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও গবেষণায় পাওয়া গেছে যে বাজারে বিক্রীত প্রায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ সিগারেট প্যাকেটের গায়ে থাকা ট্যাক্স স্ট্যাম্প আইন লঙ্ঘন করা হয়। এই গবেষণাটি করতে বাংলাদেশের আটটি জেলার মোট ৮০টি জায়গা থেকে প্রায় ২৪ হাজার সিগারেট প্যাকেট সংগ্রহ করা হয়।
এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলো দাবি করে যে তামাকের ওপর কর বাড়ালে দেশে অবৈধ বাণিজ্য বেড়ে যাবে। তবে তাদের এ দাবি যে সঠিক নয় তা এখন প্রমাণিত। কারণ প্রতি বছর সিগারেটের দাম বাড়লেও গবেষণায় দেখা যায় যে দেশে অবৈধ সিগারেটের পরিমাণ খুবই সীমিত। সরকার এ ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ালে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও গতিশীলতা আনতে পারে এই অবৈধ বাণিজ্য আরও কমে আসবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আর্টিকেল ৫ দশমিক ৩ এর অতি দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন এবং একইসঙ্গে বাস্তবায়নকারী সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘তামাকের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছেন তাদের তুলনায় তামাক কোম্পানিগুলোর রিসোর্স অনেক বেশি। তবু দেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এই অসম যুদ্ধ আমাদের লড়ে যেতে হবে। আমি সংসদেও বলেছি যে তামাক নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ৪০ বছরের মধ্যে আমাদের দেশ একটি ১৮ কোটি লোকের হসপিটালে পরিণত হবে।’
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণায় দেশে একটি রাজনৈতিক সদিচ্ছার জায়গা তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগে ১৯১ জন জাতীয় সংসদ সদস্য তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পক্ষে চিঠি লিখেছেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘শুধু সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং তামাকজনিত ক্ষতি রোধ সম্ভব নয়। গবেষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, উন্নয়ন কর্মীসহ সবাইকে এগিয় আসতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণের সপক্ষে যারা কথা বলেন তাদের সরকারকে পথ দেখাতে হবে এবং সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে। সরকারও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এমনটা প্রত্যাশা করি।’
নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। তামাকের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যেতে হবে। আমরা তখনই আশার আলো দেখতে পাবো যখন দেখব সরকার নীতিনির্ধারণে তামাক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারগুলো আরো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে।’
মো. নুরুল আমিন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, উচ্চ মাপের গবেষণা, এবং গবেষণার ফলভিত্তিক নীতি প্রণয়ন। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়তে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এর গাইডলাইন অনুসারে আরো কঠিনভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবে।