কোম্পানির ক্যাটাগরি পাল্টালে এবং সেটির উন্নতি হলে মার্জিন ঋণ মিলবে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনায় পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ঋণ পাবেন ব্রোকারেজ হাউস থেকে।
কোম্পানি পাঁচটি হলো বেক্সিমকো লিমিটেড, ভিএসএফ থ্রেড, ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস, তওফিকা ফুডস ও বিকন ফার্মা। এই কোম্পানিগুলো গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের লভ্যাংশের কারণে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।
আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লভ্যাংশসংক্রান্ত কারণে কোম্পানির ক্যাটাগরি পাল্টালে ৩০ কর্মদিবস ঋণ পাওয়া যেত না।
তবে রোববার বিএসইসি নিয়মিত কমিশন সভায় মার্জিন ঋণের নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, জেড ক্যাটাগরির কোনো কোম্পানি বা কোনো কোম্পানি যদি ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে উচ্চতর ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়, তাহলে সে কোম্পানির বিপরীতে ঋণ সুবিধা দেয়া যাবে।
তবে এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে সাত দিন। অর্থাৎ সাত কর্মদিবস পর সেই কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে পাওয়া যাবে ঋণ সুবিধা।
বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতে নতুন শেয়ার তালিকাভুক্ত হলে আগের মতোই লেনদেন শুরুর ৩০ কর্মদিবসে শেয়ার কেনায় ঋণ দেয়া যাবে না বলে জানানো হয়েছে। জেড ক্যাটাগরি বা ৪০ পিই রেশিওর বেশি শেয়ারে ঋণ দেয়া যাবে না বলে নির্দেশনাও বহাল আছে।
কাদের ক্যাটাগরি পাল্টাচ্ছে
গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে লভ্যাংশ ঘোষণার পর বেশ কয়েকটি কোম্পানির ক্যাটাগরি পাল্টাবে। এর মধ্যে ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মনোস্পুল পেপার ও পেপার প্রসেসিং।
‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে বেক্সিমকো লিমিটেড, বিকন ফার্মা, ভিএসএফ থ্রেড ও ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস।
‘এন’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে এসেছে তওফিকা ফুডস।
কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ না দিলে বা ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে এলে সেটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হয়। যেসব কোম্পানি ১ থেকে ৯ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, যেগুলো নতুন তালিকাভুক্ত হয়, সেগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে এবং যেগুলো কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হয়।
বেক্সিমকো লিমিটেড ২০২০ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে দিয়েছে ৩৫ শতাংশ।
বিকন ফার্মা আগের বছরে লভ্যাংশ দিয়েছিল ৬ শতাংশ, এবার দিয়েছে ১৫ শতাংশ।
ভিএসএফ থ্রেডও আগের বছর লভ্যাংশ দিয়েছিল ৬ শতাংশ, এবার দিয়েছে ১১ শতাংশ।
ম্যাকসন্স স্পিনিং আগের বছর লভ্যাংশ দিয়েছিল ২ শতাংশ, এবার দিয়েছে ১০ শতাংশ।
ফলে চারটি কোম্পানি ‘বি’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।
অন্যদিকে তওফিকা ফুডস তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এবার প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ১১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করায় এটিও ‘এন’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।
ক্যাটাগরি পাল্টালেও অন্যরা যে কারণে ঋণ পাবে না
আরও বেশ কিছু কোম্পানির ক্যাটাগরি পাল্টেছে। আলহাজ্ব টেক্সটাইল ১ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ায় ‘জেড’ থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উঠে আসবে।
ওটিসি ফেরত তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ায় ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উঠে আসবে।
অন্যদিকে পেপার প্রসেসিং ও মনোস্পুল পেপার ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করায় সেগুলোও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।
তবে এগুলো মার্জিন ঋণ পাবে না তার মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও বেশি থাকার কারণে।
সবশেষ প্রান্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পিই রেশিও ৫৮৫, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের পিই রেশিও ৫৩ দশমিক ৯৭, মনোস্পুল পেপারের পিই রেশিও ১৫৭ দশমিক ৬৭ এবং পেপার প্রসেসিংয়ের ৬১ দশমিক শূন্য ৪।
এর ফলে এর কোনোটিই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবে না।
কোম্পানির শেয়ারদরকে এর আয় দিয়ে ভাগ করলে পিই রেশিও পাওয়া যায়। প্রতি তিন মাস পর পর প্রান্তিক হিসাব প্রকাশ করা হয়। সেটিকে পুরো বছরের আয়ে রূপান্তর করে তা দিয়ে শেয়ারমূল্যকে ভাগ করলে এই রেশিও পাওয়া যায়।
যেমন পেপার প্রসেসিং প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৭৯ পয়সা। এই হিসাবে আয় করলে চার প্রান্তিকে আয় দাঁড়ায় ৩ টাকা ১৬ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ারদর বর্তমানে ১৯২ টাকা ৯০ পয়সা। একে ৩ টাকা ১৬ পয়সা দিয়ে ভাগ করলে পিই রেশিও বের হয় ৬১ দশমিক শূন্য ৪।
যে কারণে সেই পাঁচ কোম্পানি ঋণ পাবে
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বেক্সিমকো শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ৪ টাকা ১১ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ারদর এখন ১৪৮ টাকা ১০ পয়সা। এই হিসাবে পিই রেশিও ৯ দশমিক শূন্য ১।
তওফিকা ফুডস প্রথম প্রান্তিকে আয় দেখিয়েছে ৪০ পয়সা। কোম্পানির শেয়ারদর এখন ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা। এই হিসাবে পিই রেশিও ২০ দশমিক ৯৪।
ভিএসএফ থ্রেড প্রথম প্রান্তিকে আয় দেখিয়েছে ৪০ পয়সা। কোম্পানির শেয়ারদর এখন ২০ টাকা। এই হিসাবে পিই রেশিও এখন ১২ দশমিক ৫।
ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ৭৫ পয়সা। শেয়ারদর এখন ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। এই হিসাবে পিই রেশিও এখন ৭ দশমিক ৮৩।
বিকন ফার্মা প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৫২ পয়সা। শেয়ারদর এখন ২৩৫ টাকা ২০ পয়সা। এই হিসাবে পিই রেশিও এখন ৩৮ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট।
অর্থাৎ বিকন ফার্মার শেয়ারদর আরেকটু বাড়লেই, সুনির্দিষ্টভাবে ২৪৩ টাকা ২০ পয়সা হলেই এই কোম্পানি আর মার্জিন ঋণ পাবে না, যদি না দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের আয়ে উল্লম্ফন না হয়।
মার্জিন ঋণ কী, কোন হিসাবে দেয়া হয়
গত ১৫ নভেম্বর সেই নির্দেশনা থেকে সরে বিএসইসি পিই রেশিও বা শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে মার্জিন ঋণ দেয়ার নির্দেশনা জারি করে। যেখানে বলা হয়, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার বিধিমালা-১৯৯৬ অনুযায়ী, যেসব কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিও ৪০ পর্যন্ত থাকবে তাদের শেয়ার মার্জিনযোগ্য হবে।
বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কিনতে ১ টাকার বিপরীতে ৮০ পয়সা ঋণ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে তার বিপরীতে তিনি আরও ৮০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে পাবেন বিনিয়োগের জন্য।
গ্রাহকের বিনিয়োগ করা অর্থ বা শেয়ারের বিপরীতে নতুন শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড কিনতে ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো যে ঋণ সুবিধা দেয়, তাকেই মার্জিন ঋণ বলে।
আগে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোয় ১ অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ হারে ঋণ সুবিধা দেয়া হতো। কোনো গ্রাহকের ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে তিনি ৫০ হাজার টাকা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হতেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মার্জিন ঋণ নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। এতে বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচক ৪ হাজার ১ থেকে ৭ হাজার পয়েন্টের মধ্যে থাকলে বিনিয়োগের ৫০ শতাংশ ঋণ দেয়া যাবে। আর সূচকের ওপরে উঠলে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।