পূর্বাচল আট লেন হাইওয়ের কাজ ডিসেম্বরেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা আর হলো না। আপাতত ছয় লেনের কাজ শেষ করার চেষ্টায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ অবস্থায় ১ জানুয়ারি পূর্বাচলে শুরু হতে যাওয়া ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় যাওয়া-আসায় ভোগান্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমের প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্তকারী এই সড়ককে কেবল গতিময় স্থাপনাই নয়, বলা হচ্ছে অন্যতম পর্যটন স্থাপনাও।
রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় সম্ভব হলো না। আপাতত বাণিজ্যমেলা শুরুর আগে আট লেনের স্থলে ছয় লেনের সড়ক তৈরির কাজ শেষ করতে চাই।
‘পূর্বাচলের নতুন প্রদর্শনী কেন্দ্রে ১ জানুয়ারি মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা শুরু হবে। আমরা চাই মেলা শুরুর আগে অন্তত ছয় লেনের কাজটা শেষ হোক। তা হলেও মানুষ সহজে মেলায় আসা-যাওয়া করতে পারবে। প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই মেলায় যাতায়াত যেন স্বচ্ছন্দ হয়, আপাতত এটাই আমাদের চেষ্টা।’
রাজউক সূত্রমতে, অত্যাধুনিক এই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনও ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের যানবাহন চলবে আপন গতিতে। সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে একটি গাড়ি ৬/৭ মিনিটে বাধাহীনভাবে পার হবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা এই প্রকল্পের কাজ শেষ করব। আগে আমরা রাস্তার কাজটা শেষ করতে চাই। যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে।’
কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত মূল রাস্তাটি হবে ৮ লেনের। দু’পাশে এক শ’ ফুট করে দুটি খাল। দুটি খালেরই দু’পাশে থাকছে সার্ভিস রোড। সার্ভিস রোডেও থাকবে একাধিক লেন। তার বাইরেও থাকছে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে যুক্ত হওয়ার জন্য গেটওয়ে।
রাজউকের আবাসন প্রকল্পের বাইরে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এটি মূলত ২০১৫ সালে পাস হওয়া ‘কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের সংশোধিত রূপ। ২০১৫ সালে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫ হাজার ২৮৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সেটা দফায় দফায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
তবে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাস্তার কাজে খানিকটা সমস্যা হলেও আশপাশে আরও অনেক সড়ক আছে। মানুষজন ভেতরের সড়কগুলো দিয়ে, বিকল্প পথে যাতায়াত করতে পারবে। ফলে মেলায় যেতে ইচ্ছুকদের খুব বেশি সমস্যা হবে তেমনটা মনে হয় না।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ২০২২ সালের ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরুর অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হবে।
বাণিজ্য মেলা চলাকালে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচলে মেলাকেন্দ্রে বিআরটিসির বাস চলাচল করবে। মাসব্যাপী এ রুটে বিআরটিসির ৩০টি বাস চলাচলের জন্য চিঠি দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো। এসব বাসে ন্যূনতম ভাড়া থাকবে। এটি ব্যবহার করে সহজেই দর্শনার্থীরা কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলাকেন্দ্রে যেতে পারবেন।
ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রায় ৩০০ স্টল থাকবে। মেলাকেন্দ্রের ভেতরের অধিকাংশ জায়গা মানুষের চলাচলের জন্য ফাঁকা রাখা হবে। সে সঙ্গে থাকবে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং ব্যবস্থা। মেলার শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেয়া হয়েছে। সেখানে এক হাজার গাড়ি রাখা সম্ভব হবে।