বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কতটা কাজে লাগছে ইউলুপ

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:১৫

১০টি নতুন ইউলুপ করা হয়েছে রাজধানীর উত্তর অংশে যানবাহনের চলাচল বাধাহীন করার জন্য। চালু হওয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। এগুলো কতটা কাজে লাগছে, বোঝার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

রাজধানীর সাতরাস্তা বিজি প্রেস থেকে উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকা পর্যন্ত সড়কে তৈরি করা ১০টি ইউলুপ এ পথের ৩০ শতাংশ ট্রাফিক জ্যাম নিরসন করেছে বলে মনে করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে সরেজমিন দেখা যায়, এই প্রকল্পের সব কয়টি ইউলুপ সফলতার মুখ দেখেনি। কয়েকটিতে উল্টো যানজট বেড়ে গেছে।

৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নেয়া এই ইউলুপ প্রকল্প ২০১৬-এর ডিসেম্বরে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে।

প্রথম দিকে শুধু বিজি প্রেস ও নাবিস্কোর সামনের ইউলুপ খুলে দেয়া হলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। তখন উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছিল, সব কয়টি ইউলুপ চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। তবে সব কয়টি ইউলুপ খুলে দেয়ার পরও ওই দুটি পয়েন্টে অবস্থার উন্নতি হয়নি।

ছয় মাস আগে নাবিস্কো ও বিজি প্রেস এলাকার ইউলুপের সমস্যা জানিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয় ডিএমপি ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ। তারা কিছু সুপারিশ করলেও সিটি করপোরেশন সাড়া দেয়নি।

উত্তরা রাজলক্ষ্মীর সামনে, উত্তরা র‌্যাব-১ অফিসের সামনে, কাওলা, বনানী ওভারপাস, বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী, মহাখালী আমতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড় ও সাতরাস্তার বিজি প্রেসের সামনে মোট ১০টি ইউলুপ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

ইউলুপের কারণে নাবিস্কো মোড় পার হতে বেশি সময় লাগে বলে অভিযোগ চালকদের। ছবি: নিউজবাংলা

তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, মহাখালীর আমতলীতে যদি ইউলুপ চালু হয়, তাহলে ক্রসিং দেয়ার কথা না। এখানে এখন ক্রসিং দিতে হচ্ছে।

ইউলুপ নিয়ে যত অভিযোগ ও প্রশংসা

ইউলুপ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এ নিয়ে একাধিক চালক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ ও প্রশংসা দুটোই পাওয়া গেছে।

বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড় ও সাতরাস্তার বিজি প্রেসের ইউটার্নে ইউলুপের কারণে যান চলাচলে সুবিধা হলেও বেশ কিছু নতুন সমস্যাও তৈরি হয়েছে।

সেবা লাইন পরিবহন নামে একটি বাস কোম্পানির চালক মো. পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইউলুপ যখন করেছে, একটু জায়গা নিয়ে করতে পারত। গাড়ি ঘোরার মতো জায়গা না থাকলে ইউটার্ন করে কী লাভ? আমাদের বড় গাড়ি ঘোরাতে অনেক জায়গার দরকার। তেজগাঁওয়ের নাবিস্কোয় ইউটার্নের সমস্যা হয় সব থেকে বেশি।

‘মহাখালী বাস টার্মিনালের বেশির ভাগ গাড়ি নাবিস্কোর ইউটার্ন দিয়ে ঘোরে। একটা বড় গাড়ি ঘোরে দুই লেন নিয়ে। আর এখানে লেনই দুটা এই ইউটার্নের কারণে জায়গা আরও কমে গেছে।’

যারা মহাখালী থেকে বনানী যাবে, তাদের দুই কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘোরা লাগছে। এই পথে জ্যামের কারণে অনেক সময় লাগে ঘুরে আসতে। ফলে সময়ও নষ্ট হচ্ছে।

চেয়ারম্যানবাড়ীর সামনে ইউটার্নের পরে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার কোথাও গাড়ি ঘোরানোর জায়গা নেই। ফলে বনানী কাকলী যেতে হলে আর্মি স্টেডিয়াম হয়ে ঘুরে আসতে হবে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. কামাল বলেন, ‘যারা মহাখালী থেকে বনানী যাবে, তাদের দুই কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘোরা লাগ। এই পথে জ্যামের কারণে অনেক সময় লাগে ঘুরে আসতে। ফলে সময়ও নষ্ট হচ্ছে।’

আর্মি স্টেডিমের সামনের ইউলুপের সমস্যা নিয়ে সিএনজি ড্রাইভার মো. স্বপন বলেন, ‘এই ইউটার্নের কারণে জ্যাম লেগে থাকে। কেউ ইউটার্ন নেবে, কেউ সোজা যাবে। ইউটার্নের জায়গা কম। এদিকে ইউটার্নের কারণে রাস্তাও চেপে গেছে। ফলে যে সোজা উত্তরার দিকে যাবে সে আটকে আছে। যদি এখানে ইউটার্ন না হয়ে ছোট একটা ফ্লাইওভার করত, তাহলে এই ঝামেলা হতো না। দুইজন দুই দিকে চলে যেতাম আগে থেকেই।

‘চেয়ারম্যানবাড়ীর পর কোনো কাটা নাই। গুলশান, বনানী, বারিধারা যেতে হলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই রাস্তায় ভিআইপি গাড়ির সংখ্যা বেশি। সব মিলিয়ে দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।’

তবে উত্তরা রাজলক্ষ্মীর সামনে, উত্তরা র‌্যাব-১ অফিসের সামনে ও কাওলা এলাকার ইউলুপে কোনো সমস্যা নেই এবং এগুলো অনেক কাজে লাগছে বলে জানান এসব এলাকার চালকেরা।

তারা বলছেন, এই কয়েকটি ইউলুপের রাস্তায় যথেষ্ট জায়গা থাকার কারণে গাড়ি সহজে ঘোরানো সম্ভব।

উত্তরাগামী সিএনজি অটোরিকশার চালক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘রাজলক্ষ্মীর সামনে, উত্তরা র‌্যাব-১ অফিসের সামনে ও কাওলা এলাকার ইউলুপে কোনো সমস্যা নেই। রাস্তার জায়গা বড় হাওয়ায় কোনো ঝামেলা হয় না গাড়ি ঘোরাতে।’

সমস্যা নিয়ে কী বলছে পুলিশ

ইউটার্ন বা ইউলুপের সমস্যার কথা জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি শাহেদ আল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নাবিস্কো ও বিজি প্রেস এলাকার ইউলুপে কী কী সমস্যা হচ্ছে, সেটা চিঠি আকারে ছয় মাস আগে আমাদের মতামত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। রাস্তায় জায়গা কম, গাড়ি ঘোরাতে কী সমস্যা, পিক আওয়ারে এখানে গাড়ির সারি কতটুকু যায় এবং কী করা উচিত- এ বিষয়ে আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের এই সুপারিশ মেয়র মহোদয় থেকে শুরু করে সবাই জানেন। এখন তারা যে সিদ্ধান্ত নেয়ার নেবেন।’

সিটি করপোরেশন এ সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় বের করতে পেরেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না তারা এখনও পারে নাই। ইউলুপ আসলে ভালো। তবে আমাদের এখানে রাস্তা অপ্রশস্ত হওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছে। ইউলুপের কারণে আমাদের অনেক রাস্তা নষ্ট হয়েছে।

তেজগাঁওয়ের রাস্তায় ইউলুপের কারণে সুবিধার পাশাপাশি কিছুটা ভোগান্তিতেও পড়েছেন চালকরা। ছবি: নিউজবাংলা

‘আমরা বলেছিলাম, ইউলুপের ওখানে জায়গা যদি প্রশস্ত করে দেয়া যায়, তবে এটা কার্যকরী হবে। না হলে যেটুকু জায়গা আছে, এই জায়গায় ইউলুপ করে আসলে কোনো লাভ হবে না। জায়গা বাড়ানো না গেলে আগের মতো করে দিলেই হতো। উত্তরার দিকে এই প্রকল্পের ভালো ফল পাওয়া গেছে। কারণ সেখানে রাস্তায় জায়গা বেশি।’

ডিসি শাহেদ আল মাসুদ জানান, সিটি করপোরেশন বলছে, বড় গাড়ির ঘোরার জন্য এ ইউলুপ নয়। বড় গাড়ি আরও সামনে গিয়ে সাতরাস্তার মোড়ে ইউটার্ন নেবে। কিন্তু সে ধরনের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। একটা সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল, সেটাও ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে।

উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, আমতলীতে তারা ইউলুপ করেছে। তবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমতলীতে যদি ইউটার্ন চালু হয়, তাহলে তো ক্রসিং দেয়ার কথা না। এখানে তো এখন ক্রসিং দিতে হচ্ছে। কারণ গুলশানের লোকদের তো বের হতে দিতে হবে। সব দিক দেখতে গেলে আসলে লাভ হচ্ছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি ইউলুপ থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত কোনো কাটা নেই। এ জন্য বনানী এলাকায় গাড়ি নিয়ে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষের। আর এ কারণে জানজট বাড়ে।

কী বলছে সিটি করপোরেশন

ডিএনসিসি বলছে এক-দুইটা ইউলুপ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। ১০টা ইউটার্ন মিলিয়ে ৩০ শতাংশ যানজট কমেছে। ফলে ইউলুপ সফল।

ডিএনসিসির এ প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম নাবিস্কো ও বিজি প্রেসের সামনের ইউলুপের সমস্যার কথা বললে বলেন, ‘এটা পুরো করিডোরের একটা ইমপ্রুভমেন্টের প্রসেস। একটা ইউলুপ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। আমরা ১০টা ইউলুপ মিলিয়ে ৩০ শতাংশ জ্যাম কমাতে সফল হয়েছি।’

মহাখালী থেকে যারা বনানীতে যাবে তাদের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামের ইউলুপ ঘুরে আসতে হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক সমস্যা দিয়ে তো সকল সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করেছি, এনভারমেন্টাল দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছি। সকল কিছু বিশ্লেষণ করে আমরা টোটাল বেনিফিট পেয়েছি। এটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ডায়নামিক প্রসেস। এটা একটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রসেস। ইউটার্ন ব্যবস্থাপনা হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ছোট একটা প্রসেস।’

এটা পুরো করিডোরের একটা ইমপ্রুভমেন্টের প্রসেস। একটা ইউলুপ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। আমরা ১০টা ইউলুপ মিলিয়ে ৩০ শতাংশ জ্যাম কমাতে সফল হয়েছি।

ইউলুপগুলোর নকশা এক-এক জায়গায় এক-এক রকম হওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো কোনো ইউনিক ডিজাইন না। জায়গা সংকুলানের কারণে একেক জায়গায় একেক ডিজাইন। নেভি হেড কোয়ার্টারের সামনে একমুখী করার কারণ হচ্ছে সেখানে জায়গা সংকুলান। এখানে দুই দিকের ইউটার্ন করার মতো জায়গা নেই।’

নাবিস্কোর সামনের ইউলুপে একটা ইউটার্ন বড়, কিন্তু অপরটি ছোট হওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালের বাসগুলো যাতে ইউটার্ন নিতে পারে, সে জন্য নাবিস্কোর সামনের একটা বড় ইউটার্ন করা হয়েছে। উল্টোদিকে ইউটার্ন বড় বাস নেয় না। এ কারণে সেখানে ছোট ইউটার্ন।

তিনি জানান, প্রকল্পে ‘এ’ এবং ‘বি’ টাইপ দুই ধরনের ইউটার্ন রয়েছে। ‘এ’ টাইপে সকল গাড়ি যেতে পারবে এবং ‘বি’ টাইপে শুধু ছোট গাড়ি যেতে পারবে।

বাস চালকদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলে, ‘নাবিস্কোর সামনে বাস ঘোরানোর যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। বাস চালকরা বাঁয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে এ কারণেই তাদের সমস্যা হয়। ডিএমপি যদি মনে করে, আগের ব্যবস্থাপনাই ভালো ছিল, তবে আমরা এক মুহূর্তের মধ্যে এটা বন্ধ করে দেব।’

এ বিভাগের আরো খবর