বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেট্রোরেল চালু হলে বাসের কী হবে

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:০৪

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মেট্রোরেল যেহেতু আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ী, কাজেই যাত্রীরা এটিকে অগ্রাধিকার দেবেন। ফলে বাসের চাহিদা কমে যাবে। তবে বাসমালিকরা মনে করেন, ঢাকায় যাত্রীসংখ্যার তুলনায় যানবাহন অপ্রতুল। কাজেই গণপরিবহন খাতে যাত্রীস্বল্পতার কোনো প্রভাব পড়বে না।

স্বপ্নের মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয়েছে। এখন বাণিজ্যিকভাবে চলার অপেক্ষা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেলে চড়ে যাতায়াত করতে পারবেন ঢাকাবাসী।

মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর যানজট সহনীয় হবে বলে আশা করছে সরকার। এটা জনগণের জন্য স্বস্তির খবর হলেও প্রশ্ন উঠেছে মেট্রোরেল এলে বাস-মিনিবাসসহ গণপরিবহন চাপের মুখে পড়বে কি না।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ বলেছে, মেট্রোরেল চালু হলে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

বাসমালিকরা মনে করেন, ঢাকায় যাত্রীসংখ্যার তুলনায় যানবাহন অপ্রতুল। কাজেই গণপরিবহন খাতে যাত্রীস্বল্পতার কোনো প্রভাব পড়বে না।

ডিএমটিসিএল অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার।

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের যে লাইনটি নির্মিত হচ্ছে, সেটির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। এমআরটি-৬ নামে পরিচিত এ রুটটি সবার আগে চালু হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।

কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত লাইনের কাজ আগামী জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এটি মেট্রোরেল লাইন-১ রুট নামে পরিচিত। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রোরেল হবে পাতালপথে। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত অংশ হবে উড়ালপথে। সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

আগামী বছরের ডিসেম্বরে লাইন-৫-এর উত্তরের রুটের কাজও শুরু হওয়ার কথা। এটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারায় শেষ হবে।

ডিএমটিসিএলের পরিসংখ্যানে বলে, সব লাইন চালু হলে ঢাকায় মেট্রোরেলে প্রতিদিন ৬০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। রাজধানীতে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যাত্রী প্রতিদিন গণপরিবহনে যাতায়াত করেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় বাস-মিনিবাস চলে সাড়ে ৪ হাজার। সিএনজি ৩০ হাজার, হিউম্যান হলার ও লেগুনা মিলে ৮ হাজার ও রিকশা প্রায় সাড়ে ৭ লাখের মতো। এসব যানবাহনের মাধ্যমে রাজধানীতে প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি যাত্রীর ট্রিপ হয়। এর মধ্যে ৭৮ শতাংশ যাত্রী যাতায়ত করেন বাসে।

বাণিজ্যিকভাবে মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবসায় প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে বাস কীভাবে চলবে, এটা তাদের বিষয়। যেখানে ভালো সেবা ও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে, সেখানেই যাতায়াত করবেন যাত্রীরা।

‘গণপরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা চলছে। এটা কেউ চায় না। ফ্রাঞ্চাইজি বাস চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল একবার, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সারা দুনিয়াতে এভাবেই বাস চলে। অভিজ্ঞতায় তাই বলে।’

সাবেক এই যোগাযোগসচিব আরও বলেন, ‘এখন যার যা খুশি, সেভাবে একটা বাস কিনে রাস্তায় নামিয়ে দেন। এ রকমভাবে বাস দুনিয়ার কোথাও চলে না। ফ্রাঞ্চাইজি বাস চলাচল করলে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’

মেট্রোরেল চালু হওয়ার পরও রাজধানীতে বাস বা অন্যান্য গণপরিবহনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে দাবি বাস মালিকদের

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ৯০ শতাংশ যাত্রী গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। মেট্রোরেল চালু হলে এ খাতে কোনো চাপ আসবে না। এ ছাড়া বাসের যাত্রী আর মেট্রোরেলের যাত্রী এক নয়। মেট্রোরেলের ভাড়া অনেক বেশি হবে।’

এদিকে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে দুই-তিনটি বড় কোম্পানি গঠন (ফ্রাঞ্চাইজি) করে পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এটা করা হলে বাসমালিকরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হবেন। অপরদিকে যাত্রীরাও এর সুফল পাবেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল হক বলেন, ‘কম সময়ে আরামদায়ক ও দ্রুতগতির জন্য যাত্রীরা অগ্রাধিকার দেবেন মেট্রোরেলকে। মেট্রোরেলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, বাস সে ধরনের সেবা দিতে পারবে না। ফলে কিছুটা চাপে পড়বে গণপরিবহন খাত।’

তিনি মনে করেন, মেট্রো চালুর আগে ফ্রাঞ্চাইজি বাস সার্ভিসের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা করা হলে ট্রিপের সংখ্যা আরও বাড়বে। ফলে বাসমালিকদের আয় বাড়বে। তখন অনেকেই বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। এতে করে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

শামছুল হক আরও জানান, অভ্যন্তরীণ রুটে সেবার মান খারাপ। তার ওপর রয়েছে যানজট। মেট্রোরেল চালু হলে সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হবে। ফলে গণপরিবহনে যাত্রী কিছুটা কমে যাবে।

প্রতি বছর ঢাকা শহরে যাত্রী বাড়ছে প্রায় ৩ শতাংশ করে। তবে করোনার কারণে এটি কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। ঢাকা শহরে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি চড়ে বাস-মিনিবাসে। তার পর রিকশায়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন ঢাকা শহরে গণপরিবহনে সাড়ে ৩ কোটি যাত্রীর ট্রিপ হয়। আর মেট্রোরেল চালু হলে ৬০ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। কাজেই মেট্রোরেল এলে গণপরিবহনে চাপ আসবে না।

তিনি বলেন, যেটা নিয়ে শঙ্কা তা হলো, বাংলাদেশে পরিবহন খাত নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, বাস্তবতার বাইরে তারা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীবান্ধব সিদ্ধান্ত আসে না।

তার মতে, মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি নির্ধারণ করলে এর পুরো সক্ষমতা কাজে লাগানো যাবে না। এটা করা হলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও তিনি মনে করেন, ৯৫ ভাগ যাত্রী গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল থাকবে।

এ বিভাগের আরো খবর