জ্ঞানের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষ করে তোলার শিক্ষাব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলতে না পারলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
রাজধানীর দনিয়া কলেজে রোববার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। মুখস্থ, পরীক্ষানির্ভর ও সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষা নয়; আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছি যেখানে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি তোমরা (শিক্ষার্থীরা) দক্ষতা অর্জন করবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতাগুলো যদি দিতে না পারি, তাহলে সে ব্যর্থতা আমাদের।’
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের টিকার কার্যক্রম বিস্তৃত করা হবে বলেও জানান দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়ছে। সেজন্য সারা দেশে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম বিস্তৃত করা হচ্ছে। সবাইকেই টিকার আওতায় আনা হবে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের দিকে যেতে আরও সময় লাগবে। আমাদের দুই বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, মার্চ মাসের দিকে করোনা সংক্রমণ বাড়ে। তাই মার্চ মাস পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। খুলে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।
তবে ক্লাস হচ্ছে সীমিত পরিসরে। প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হচ্ছে না। শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিন করে ক্লাসে যেতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। এই ধরন খুব ছোঁয়াচে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দেশেও পাওয়া গেছে করোনার এই ধরনের আক্রান্ত রোগী। সরকার থেকে বলা হয়েছে, ওমিক্রনে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে ফের বন্ধ করে দেয়া হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রীই। তিনি বলেন, ‘ওমিক্রনের কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হতে পারে। তবে আমাদের এ জাতীয় কোনো পরিকল্পনা এখনও নেই। আমরা চাই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকুক।’
কারিগরি শিক্ষায় জোর দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আইসিটিতে দক্ষ না হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবেও আমরা ব্যর্থ হবো। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে। তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে। আগের তিনটা বিপ্লবও আমরা ধরতে পারিনি। আইসিটিতে দক্ষ না হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদেরকে পেছনে ফেলে চলে যাবে।’
আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদেরকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের বড় চাওয়া তোমাদেরকে (শিক্ষার্থী) দক্ষ নাগরিক হতে হবে। বিজ্ঞান ও সাহিত্যের চর্চা করতে হবে। দেশমাতৃকা যাতে কষ্ট না পায় সে জন্য তোমাদের অতন্দ্র প্রহরী হতে হবে।’
দনিয়া কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি কে এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি কামরুল হাসান রিপনসহ আরও অনেকে।