কুষ্টিয়া সদরের বটতৈল ইউনিয়নে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতানোর জন্য এক আওয়ামী লীগ নেতা গোপনে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি নৌকার প্রার্থীকে হারাতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতানোর কথা বলেন।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়।
২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বৈঠকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত আছেন। গোপনে ভিডিওটি রেকর্ড করেছেন কোনো এক অংশগ্রহণকারী।
সেখানে জাতীয় পর্যায়ের নেতার উদাহরণ দিয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের এখানে গ্যাঞ্জামের পর আসামিদের ছাড়ানোর জন্য নেতার সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘নৌকার অবস্থানটা ভালো নেই। ওর (নৌকার প্রার্থী) যা অবস্থা তাতে ভোট চাওয়ার মতো, করার মতো অবস্থা নেই।’
ভিডিওতে ওমর ফারুক বলেন, ‘ওসব বিশ্লেষণে যাব না। আমরা ঘোড়া মার্কার ভোট করছি। নৌকার ক্যান্ডিডেটের অবস্থা সবাই জানেন, তার পক্ষে জেতা সম্ভব নয়। তাই নির্দেশনা আসছে ঘোড়া মার্কার (বিদ্রোহী প্রার্থী) ভোট করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো নেতার নাম বললাম না, তবে সিগন্যালের মতো কথা বলছি।’
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কেউ একজন গোপনে ভিডিওটি রেকর্ড করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
এ সময় উপস্থিত নেতারা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কে সিগন্যাল দিয়েছে তা বলতে পারব না। এত বিশ্লেষণ করে বলা সম্ভব নয়। আমাকে বলেছে ঘোড়া মার্কার ভোট করতে, আমি ঘোড়া মার্কার ভোট করছি।’
ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার সাহস নাই নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে ভোট করার। আমি নৌকাকে জেতাতে পারছি না। যেহেতু আমাদের আওয়ামী লীগ করা একজন লোক দরকার, সেই হিসেবে এই নির্দেশনা দিয়েছে।’
বৈঠকের বিষয়ে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকটি হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিকের অফিসে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ইউনিয়নের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী তা ঠিক করতে ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডেকেছিলাম।
‘তবে আমি কোনো কথা বলিনি। ওমর ফারুকই এসব বলেছেন। তবে তার ঘোড়া মার্কায় ভোট করার প্রস্তাব সব নেতা মেনে নেননি।’
ভিডিওর বক্তব্যের কথা স্বীকার করে ওমর ফারুক বলেন, ‘কেউ একজন গোপনে ভিডিওটি করেছেন।’
তবে কোন নেতা এ সিগন্যাল দিয়েছেন তার নাম বলেননি বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার সঙ্গে।
তিনি জানান, এ ভিডিওর ব্যাপারে তিনি জানেন না। তবে দলের বিপক্ষে কেউ কথা বললে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকার প্রার্থী এমএ মোমিন মণ্ডল বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটা খুবই নিন্দনীয়। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
ওমর ফারুককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তিনি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি জামায়াত থেকে এসেছেন। জামায়াত-বিএনপিকে সমর্থন করার প্রবণতা থেকে এখনও বের হয়ে আসতে পারেননি। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই তিনি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোট হবে। গত ২১ ডিসেম্বর ওই স্বতন্ত্র প্রাথী মিজানুর রহমান মিন্টু ফকিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে ওই দিন তার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।