পোড়া স্বরবর্ণ শেখার বইয়ের পাশে পড়ে আছে অক্ষত ফিডার। হয়তো দুধের এই ফিডারে চুমুক দেয়ার আগেই পুড়ে গেছে কোনো শিশু।
কিছুটা দূরেই হাতের চুড়ি। দুই সেট চুড়ির সাইজ অনুযায়ী এগুলো আট বছর বয়সী কোনো শিশুর। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়।
শনিবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ অভিযান-১০-এর ডেকে গিয়ে।
অসংখ্য শিশু পুড়ে নিঃশেষ হওয়ার কথা বলছেন অভিযান-১০ লঞ্চে যাত্রীদের উদ্ধারে যাওয়া বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ শতাধিক। আহত অনেককে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল।
তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকে বলছেন, নৌযানটিতে যাত্রী ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার।
ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা সফিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা তো সেই ভোর থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে চেষ্টা করছিলাম। কতজনকে বাঁচাতে পেরেছি জানি না। তবে পুড়ে ছাই হয়েছে বহু মানুষ। সঠিক করে আমি কেন, কেউ বলতে পারবে না।’
পোনাবালিয়া এলাকার বাসিন্দা অনিমেশ মণ্ডল বলেন, ‘লঞ্চের ডেকে উইঠা অনেক লাশই দেখছি। অনেক জায়গায় মানুষের শরীরের নানা অংশ পোড়া অবস্থায় দেখেছি। কয়েক জায়গায় শিশুদের দুধের ফিডার, হাতের চুড়ি ও খেলনা পইড়া থাকতে দেখছি। কিন্তু শিশুগুলার কোনো চিহ্ন পাই নাই।’
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ঝালকাঠি ইউনিটের মুখপাত্র রাজু হাওলাদার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত লঞ্চে আগুনের ঘটনায় ঝালকাঠিতে ৫১ জন নিখোঁজের তালিকা হয়েছে।