ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০-এ আগুন লাগার পর থেকেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না নৌযানটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর। আগুন লাগার শুরুতেই তারা তীরে নেমে পালান বলে অভিযোগ করেছেন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, আগুন লাগার ১৫ মিনিট পর নদীর পাড়ে নিয়ে লঞ্চটি থামান মাস্টার। যাত্রীদের ফেলে রেখে সেখান থেকেই পালান লঞ্চের মাস্টার, সারেং, সুকানিসহ সব কর্মচারী। ওই সময় কয়েক শ যাত্রী নিচে নামতে পারলেও লঞ্চে থেকে যান ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীরা।
বেঁচে যাওয়া যাত্রী বরগুনার চরকলোনি এলাকার তুহিন খান জানান, ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ার সময়ই যাত্রী ভর্তি ছিল। চাঁদপুরে থামালে সেখান থেকে এত যাত্রী ওঠে যে তিল ধারণের ঠাঁইও ছিল না। সেই অবস্থায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া এলাকায় সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে রাত সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চের ইঞ্জিনরুমে আগুন ধরে যায়। ওই সময় কেবিন ও ডেকের বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিল।
তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার ১০-১৫ মিনিট পর লঞ্চটি একটি চরে ভিড়েছিল। ওই সময় লঞ্চের কোনো স্টাফকে পাওয়া যায়নি। আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে লাফ দিয়ে তীরে নামি। পরে হুড়োহুড়ি করে কয়েক শ মানুষ নামতে পেরেছে।
‘তবে যারা কেবিনে এবং ঘুমিয়ে ছিল তারা নামতে পারেনি। তখন আরও অনেকে লঞ্চ থেকে আমার মতো লাফ দিয়ে নেমে যায়। লঞ্চটি যদি তখন সেখানে নোঙর করত, সবাই নেমে যেতে পারত।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, মেসার্স নেভিগেশন কোম্পানির লঞ্চটির ধারণক্ষমতা দিনে ৭৬০ জন। তবে রাতে তা কমে হয় ৪২০ জন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় লঞ্চটি ২৫ জন কর্মচারীসহ ৩১০ জনের ভয়েস ক্লিয়ারেন্স দিয়ে টার্মিনাল ছাড়ে।
আগুনের ঘটনার পর লঞ্চের সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেনসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ আছে। তবে শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোনে লঞ্চটির মালিক হাম জালাল রনির সঙ্গে নিউজবাংলার কথা হয়।
তখন তিনি দাবি করেন, আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত নাশকতা। তবে শনিবার দুপুর থেকে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানও জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত লঞ্চের কোনো স্টাফ বা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ শতাধিক। আহত অনেককে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল।
তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকে বলছেন, নৌযানটিতে যাত্রী ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার।