অভাব-অনটনের একপর্যায়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে খানিকটা ভালো থাকার আশায় দুবাই পাড়ি জমিয়েছিলেন জাহানারা বেগম। বছর দুয়েক পরই সব হারিয়ে দেশে ফিরতে হয় তাকে।
জীবিকার তাগিদে অল্প বেতনে চাকরি নেন রাজধানী ঢাকায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। স্বামী বশির আহমেদ স্বপন চাকরি নেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক হিসেবে।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর তিল তিল করে এগিয়ে চলে তাদের জীবন ও জীবিকা। কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে স্বামী বশির আহমেদ স্বপনের চাকরি চলে গেলে দুজনেই সিদ্ধান্ত নেন নিজের জেলা বরগুনায় ফেরার।
সারা জীবনের সঞ্চিত টাকা দিয়ে জাহানারা বেগমের সহযোগিতায় আটটি বিদেশি গরু কেনেন বশির। এরপর বাড়ি ফেরার স্বপ্ন নিয়ে দুই মেয়ে শারমিন আর শাপলাকে সঙ্গে করে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন জাহানারা। সঙ্গে ছিল বড় মেয়ে শারমিনের দুই শিশুসন্তানও। দেড় বছরের আছিয়া এবং চার বছরের আব্দুল্লাহ।
শেষ পর্যন্ত জীবনের হিসাব আর মেলেনি জাহানারার।
বৃহস্পতিবার ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চের আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন জাহানারা। দুর্ঘটনায় এখনও নিখোঁজ তার বড় মেয়ে শারমিন, নাতি আব্দুল্লাহ এবং নাতনি আছিয়া।
নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েও বেঁচে যান জাহানারার সাঁতার না জানা শাপলা। মোহাম্মদপুর মকবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী তিনি।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত জাহানারার মরদেহ শুক্রবার রাতে বুঝে পেয়েছেন স্বামী বশির আহমেদ স্বপন।
জাহানারার স্বপ্নের সেই গরুর ফার্ম যেমন ছিল, তেমনই আছে। জীবন নদীর তীরে এসেই যেন তরী ডুবে গেল জাহানারার। জীবনের সব লেনদেন অমীমাংসিত রেখেই চলে গেলেন তিনি।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ শতাধিক। আহত অনেককে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল।
তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকে বলছেন, নৌযানটিতে যাত্রী ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার।