সংসদে প্রধান বিরোধী দল, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জে ফেলার কথা বলছেন নেতারা। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই থাকার কথা জানিয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য।
অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থনের ঘোষণা এখনও আসেনি। সেটি কিছুদিনের মধ্যেই আসবে বলে জানিয়েছেন দলটির জেলাপ্রধান।
আগের দুটি নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী দেয়নি জাতীয় পার্টি। প্রথম নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ছিল দলটি। দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় তারা সংসদে প্রধান বিরোধী দল, আবার সরকারেও অংশীদার। এবারও প্রধান বিরোধী দল, তবে এবার আর সরকারে নেই তারা।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে গিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নের কথা বলছে জাতীয় পার্টি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য জনসমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের কথাও বলছেন নেতারা।
তবে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খুব কম এলাকাতেই প্রার্থী দিয়েছে দলটি। যেখানে যেখানে প্রার্থী ছিল, সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পেরেছে এমনও নয়। তবে নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকায় জিতেছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা।
সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ে গঠিত সদর আসনে গত তিনটি নির্বাচনে জিতেছে জাতীয় পার্টিই। এর মধ্যে দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছিল জোট আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ।
২০১৬ সালের শেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দশম সংসদ নির্বাচনের পুরো বিপরীত চিত্র দেখা যায়। সেবার জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দিয়ে পাশে ছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর। পাঁচ বছর পর সেই একই চিত্র।
২০১১ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন কাউকে সমর্থন না দেয়ার পর আওয়ামী লীগেরই দুই নেতা শামীম ওসমান ও আইভী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন, তখন শামীমের পাশে ছিল জাতীয় পার্টি। তার পরও আইভীর কাছে পেরে ওঠেননি তার প্রতিদ্বন্দ্বী।
নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাই সেলিম ওসমান। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে সমর্থন করি না। তবে আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট, যেখানে নৌকা আছে, সেখানে লাঙ্গল নাই। সেখানে লাঙ্গল আছে, সেখানে নৌকা নাই। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
তবে জাতীয় পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সানু দাবি করেছেন, তার দলের সিদ্ধান্ত হয়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এখনও আসেনি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা মহাজোট, সে হিসেবে আগের নির্বাচনগুলোয় শামীম ও আইভীকে সমর্থন জানিয়েছিলাম। তবে এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান চূড়ান্ত হয়নি।
‘কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে নির্বাচনে কাজ করতে। তবে এখনও জানানো হয়নি কার হয়ে যে আমরা মাঠে নামব। এ কারণে সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকার তাদের কাউকে আমরা এখনও সমর্থন জানাইনি। আমরা কাকে সমর্থন করব, তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেব।’
জাতীয় পার্টি কেন নির্বাচনে নিল না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রার্থী দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র নির্দেশ দেয় নাই। তাই প্রার্থী হই নাই।’
নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কিছু ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়েছে জাতীয় পার্টি। কয়েকটি ইউনিয়নে নৌকা মার্কার প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন পার্টির প্রার্থীরা।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বন্দর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সোনারগাঁওয়ের শম্ভুপুরায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপির নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। বিএনপি কেন্দ্র থেকে ভোট বর্জনের কথা বললেও স্বতন্ত্র পরিচয়ে লড়ার কৌশল নিয়েছে।
মেয়র পদে অন্য চার প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জসিম উদ্দিনকে নিয়ে আলোচনা নেই।আগামী ১৬ জানুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ২৭টি ওয়ার্ডে ভোটের তারিখ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২৭টি ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৯ জন পুরুষ ভোটার ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ জন নারী ভোটার। চারজন আছেন ট্রান্সজেন্ডার।