ভর্তির আগে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য ডোপ টেস্টের সনদ চাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ভর্তির জন্য আপাতত ডোপ টেস্টের সনদ লাগবে না বলে জানিয়েছেন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘ডোপ টেস্ট নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই শিক্ষার্থীদের এখন সনদ দেয়া লাগবে না। ডোপ টেস্ট করতে হলে আমরা করব। ওদের সনদ নিয়ে আসতে হবে না।’
বিভিন্ন বিভাগ থেকে সনদ চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আগে জানলে আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতাম। এখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ওয়েবসাইটে নোটিশ দিয়ে দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের আপাতত ডোপ টেস্টের সনদ লাগবে না।’
ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ, বাংলা বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং ইতিহাস বিভাগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের সনদ আহ্বান করেছে।
এসব বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট দিনে এসে অন্যান্য জরুরি কাগজপত্রের সঙ্গে ডোপ টেস্টের সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
ডোপ টেস্টের নীতিমালা তৈরির জন্য গঠিত কমিটি তাদের সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা দিয়েছে। তবে এখনও এসব সুপারিশ অনুমোদিত হয়নি।
নীতিমালার জন্য গঠিত কমিটির সদস্য ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, ‘আমরা সুপারিশ জমা দিয়েছি। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত না হলে এটি প্রয়োগ করা হবে না। সনদ চেয়ে কেউ বিজ্ঞপ্তি দিলে সেটি তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে আমার অনুষদ এ রকম বিজ্ঞপ্তি দেয়নি।’
ডোপ টেস্ট নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা
কয়েকটি বিভাগ ডোপ টেস্টের সনদ চাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোক প্রশাসন বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া এক ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভর্তি হতে আমাদের এমনিতেই অনেক টাকা খরচ হয়। তার ওপর এই টেস্টের খরচের জন্য বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন টাকা নিচ্ছে। আমি চার হাজার টাকা খরচ করে সনদ করিয়েছি। এখন যদি এ বিষয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত না হয় তাহলে আমাদের টাকাটা খরচ করাল কেন? উনাদের আরও সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিল।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মনোনয়ন পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই সনদ লাগবে বলার পর আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমার এলাকায় এ ধরনের টেস্ট করা হয় না। আর দূরে কোথাও গিয়ে করতে চাইলে বিশাল অঙ্কের টাকা প্রয়োজন হচ্ছে। প্রয়োজন না হলে সেটি আমাদের বললে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ার পরও কেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সনদ চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজনীন আফরোজ হক বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই চাওয়া হচ্ছে। আমরা তো একা কিছু চাইতে পারি না। আমরা নিজেরাও আশ্চর্য যে এটা কেন বলল?’
লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেন, ‘নীতিমালা চূড়ান্ত না হলে বিভাগ সনদ নিতে পারে না। এটি হয়তো ভুলে টানানো হয়েছে। আমরা সংশোধন করে ফেলব।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফেরদৌস হোসাইন বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে। এটা আমরা তৈরি করিনি। তারপরও আমরা দেখব।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাকসুদ কামালকে ফোন দিলে তিনি প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তবে অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে ফোন দেয়া হলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে পরে ফোন করতে বলেন। পরে মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠালে কোনো সাড়া দেননি।
নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ার পরও সনদ চাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মু. সামাদ বলেন, ‘এটি হতে পারে না।’