নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে নাটক বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন করতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করেছিলাম বহুদলীয় গণতন্ত্রের মধ্যে বাস করব বলে। কিন্তু আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
“এখন নতুন একটি নাটক শুরু করেছে। সেটা হলো সংলাপ। অর্থাৎ ‘সং’-এর আলাপ। ‘সং’রা যেখানে বসে আলোচনা করে, যাকে বলা হয় জোকার (সং)।”
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দলকে দাওয়াত করে বলেছেন, ‘আমরা একটি নতুন, ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করি।’ নির্বাচন কমিশন কী করবে, নির্বাচন কমিশন তো কাজই করতে পারে না, যতক্ষণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে।
‘আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ
বেগম খালেদা জিয়াকে আবারও দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করেন ফখরুল। বলেন, ‘তিনি এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করেছেন।’
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির ব্যবস্থা করতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতেও বলেন ফখরুল। বলেন, ‘দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠা করুন, এই হোক আমাদের শপথ।
‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, ঘরোয়া আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আমরা এখানে এসেছি। আমরা কোনো উৎসব করতে আসিনি। এসেছি দানবীয় সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য।’
ফখরুল বলেন, ‘আবেগ দিয়ে, স্লোগান দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায় না। আগে আমাদের সুশঙ্খলভাবে দলকে তৈরি করতে হবে। আমাদের মধ্যে যদি শৃঙ্খলা না থাকে, তাহলে যুদ্ধে জয় লাভ করা যাবে না। আমাদের বড় আন্দোলনের জন্য, কঠিন আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার জন্য তৈরি থাকতে হবে।’
সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে
এই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, র্যাবের সাত কর্মকর্তাকে আমেরিকা ভিসা বাতিল করে দিয়েছে।
বিএনপি নেতার অভিযোগ, সারা দেশে তাদের পাঁচ শর বেশি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মায়ের বুক খালি হয়েছে, স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, বন্ধু তার বন্ধুকে হারিয়েছে। বোন তার ভাইকে হারিয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং তাদের অত্যাচার-নির্যাতন চলছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ কোথাও নিরাপদ নেই। বেড়াতে গিয়েও মা-বোন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সোহরাব উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সালাহ্ উদ্দিন সরকার, বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবু ও ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইসরাক হোসেন।