বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চরে ছুড়ে ফেলেও মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি জিয়াসমিন

  •    
  • ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:০০

জিয়াসমিন জানান, দুই শিশুসন্তান মাহিনুর ও তামিমকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। অভিযান-১০ লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকে ছিলেন তারা। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে জিয়াসমিনের ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখেন লঞ্চের পেছনের অংশে আগুন জ্বলছে।

‘আগুন দেখে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। একবার মনে হয় ছেলেমেয়েরে নিয়ে লাফ দিই। তবে নিচে তো পানি। চারদিকে ধোঁয়া, দম নিতে পারছিলাম না। ছেলেমেয়েরে নিয়ে যেদিকে ধোঁয়া কম সেদিকে দৌড়াইতে থাকি। লঞ্চটা চরের কাছে আসার পর ওদের নামানোর কোনো উপায় না পাইয়া বালুর মধ্যে ফেলি। নিজেও লাফ দিই। বাইচ্চা গেছি, মনে করছিলাম। মাইয়াডারে বাচাইতে পারলাম না। অ্যাম্বুলেন্সে আমার মা সারাজীবনের লাইগা ঘুমাইয়া গেছে।’

এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুনের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া জিয়াসমিন। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ৩৮ জনের প্রাণহানির কথা নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে এসে উপস্থিত হয় সন্তানসহ জিয়াসমিনকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স।

ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে জিয়াসমিন নিউজবাংলাকে জানান, দুই শিশুসন্তান মাহিনুর ও তামিমকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। অভিযান-১০ লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকে ছিলেন তারা। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে জিয়াসমিনের ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখেন লঞ্চের পেছনের অংশে আগুন জ্বলছে।

কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। লঞ্চের ওপর আগুন আর লঞ্চটি তখন মাঝনদীতে। লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পানিতে নামার কথা মনে হয়েছিল। তবে তার দুই সন্তান সাঁতার কেটে তীরে যেতে পারবে না দেখে ছোটাছুটি শুরু করেন।

আগুন লাগা অবস্থায় লঞ্চটি কিছুক্ষণ চলার পর একটি বালুর চর দেখতে পান জিয়াসমিন। চর দেখে দোতলা থেকে নিচে ছুড়ে ফেলেন দুই সন্তানকে, নিজেও লাফ দেন।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। চর থেকে উদ্ধারের পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আসার পথে মাওয়া ফেরিঘাটে মারা যায় তার ছোট মেয়ে মাহিনুর। মেয়ের বয়স সাত বছরের মতো।

জিয়াসমিনের খালু আবুল হোসেন জানান, নানির মৃত্যুর সংবাদে কেরানীগঞ্জের সুবাড্ডায় এসেছিলেন বরগুনার জিয়াসমিন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও দুই সন্তান। স্বামী খলিল আগেই বরগুনায় চলে যান। গতকাল রাতে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে অভিযান-১০ লঞ্চে করে বাড়ি ফিরছিলেন জিয়াসমিন। ফেরার পথেই লঞ্চটি অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়। আগুনে দুই সন্তানসহ জিয়াসমিন নিজেও দগ্ধ হন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসাধীন জিয়াসমিন ১২ শতাংশ ও তার ছেলে তামিম ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন।

ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা মো. রায়হান নিউজবাংলাকে জানান, রাত ৩টা ২৮ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস খবর পায়। ৩টা ৫০ মিনিটে ১৫টি ইউনিট আগুন নেভানো শুরু করে। সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

লঞ্চের যাত্রী সোলাইমান আকন বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দে লঞ্চে আগুন ধরে যায়। লঞ্চের পেছনের অংশ থেকে তৃতীয় তলার সামনে পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’সাইদুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী জানান, প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই লঞ্চ থেকে নদীতে লাফ দেন।

এই লঞ্চে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিল বলে জানান কেবিন বয় ইয়াসিন। তিনি বলেন, ‘ওপরে থাকা বেশির ভাগ যাত্রী নদীতে লাফ দিয়েছে। যারা ঘুমিয়ে ছিল তারা সবাই মারা গেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর