বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঝালকাঠিতে লঞ্চের আগুনে দগ্ধ মো. কালু।
পোড়া শরীরের যন্ত্রণা, সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৯ সদস্যের খোঁজ না পাওয়ায় অঝোড়ে কাঁদছেন তিনি।
কালু জানান, ঢাকায় তিনি রুটির দোকানে কাজ করেন; বাড়ি বরগুনায়।
তিনি বলেন, ‘আমার বড় বোনের স্বামী কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে বরগুনা এসেছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে আমার স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাগ্নে, ছোট বোনসহ মোট ১০ জন ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিলাম।
‘হঠাৎ শুনতে পেলাম আগুন লেগেছে। এরপর ছোটাছুটি শুরু হলো। আগে বুঝতে পারলে সবাইকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিতাম। আমি এখানে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি। কাউকে খবরও দিতে পারছি না। কারও খোঁজও পাচ্ছি না।’
স্ত্রী-সন্তানকে খুঁজছেন ঢাকার বায়িং হাউজ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনও। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ছুটিতে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি বরগুনায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন। মেঝো মেয়ে লামিয়া অষ্টম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে নুসরাত দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে ইমু ছিলেন ঢাকায়।
ইসমাইল বলেন, ‘আগুন লাগার পর ঘুম ভেঙে দেখি সবাই ছুটোছুটি করছে। খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ সঙ্গে আমার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও বাচ্চারা আছে। লাইফ জ্যাকেটের সন্ধানে তখন নিচে ছুটে যাই। কিছুক্ষণ পর ফিরে মা ছাড়া আর কাউকে পাইনি। উদ্ধারকারী ট্রলারে মাকে নিরাপদে নিয়ে আসি।
‘শুক্রবার সকালে হাসপাতালে খোঁজ নেই। দেখি সেখানে ভর্তি আমার মেঝো মেয়ে লামিয়া। তার মুখ ঝলছে গেছে। ছোট মেয়ে আর স্ত্রীর খোঁজ পাইনি এখনও।’
লঞ্চযাত্রী ইসমাইলের নিখোঁজ স্ত্রী ও ছোটমেয়েইসমাইলের বড় মেয়ে তানজিলা ইমু জানান, রাত সাড়ে এগারটার দিকে বাবা মা ও বোনদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। রাত ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে বাবা ফোন করে ‘লঞ্চে আগুন লেগেছে, মা দোয়া করিস’... বলে লাইন কেটে দেন। এরপর অনেক চেষ্টায় ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে বাবার ফোনে কল করলেও, চিৎকার ছাড়া কিছু শুনিনি।’
বেঁচে ফেরা যাত্রীরা বলছেন, এ লঞ্চের বেশিরভাগ যাত্রীই বরগুনার। তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়ি যাচ্ছিলেন।
নিউজবাংলাকে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু লঞ্চটি বরগুনায় আসছিল, যাত্রীদের অনেকেই বরগুনার। আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে ঘটনাস্থলে টিম পাঠিয়েছি। নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা করছি।’
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ৩৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুকে ঢাকায় নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। বাকিদের মরদেহ লঞ্চ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কেবিন বয় ইয়াসিন জানান, লঞ্চের নিচতলার পেছনে ইঞ্জিন রুমের পাশের ক্যানটিনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। সেখান থেকে প্রথমে ইঞ্জিন রুমে ও তারপর পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আগুনের ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি করা হয়েছে।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন দগ্ধ লঞ্চযাত্রীদের দেখতে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের হিসাবমতে লঞ্চে ৩৫০-এর মতো যাত্রী ছিল। এর বেশি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে।’