বরগুনা সদরের রাজু আহমেদ ঢাকার খিলগাঁওয়ে ব্যবসা করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন।
জমিজমার ভাগবাঁটোয়ারাসংক্রান্ত কাজে বৃহস্পতিবার রাতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বাড়ির পথে রওনা দেন। লঞ্চের দোতলার ডেকে বিছানা পেতে চারজনই ঘুমিয়ে ছিলেন।
তবে বাড়ি যাওয়া আর হলো না। পথে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় তারা কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে শীতের রাতে নদী সাঁতরে উঠেছেন তীরে।
অন্তত ৩৮ জনের প্রাণ ঝরেছে যে দুর্ঘটনায়, সেখান থেকে কীভাবে প্রাণে বেঁচেছেন সেই বর্ণনা নিউজবাংলাকে দিয়েছেন রাজু।
তিনি বলেন, ‘বিকট শব্দে ঘুম ভাইঙ্গা যায়। আগুন লাগার ১৫ মিনিট পর লঞ্চ একটা চরে ভিড়ছিল। তহনও মাইনষের গায়ে আগুন লাগে নাই। সবাই দৌড়াদৌড়ি, কান্নাকাটি করতে আছিল।
‘ওই সময় ইঞ্জিনরুমে কেউ ছিল না। চরে নোঙর করার লোক না থাকায় জোয়ারের তোড় লঞ্চ ভাসাইয়া মাঝগাঙ্গে লইয়া যায়। প্রায় এক ঘণ্টা ভাসতে ভাসতে অপর পাড়ের কাছাকাছি চইলা যায়। তহন পুরা লঞ্চে আগুন।’
রাজু আরও বলেন, ‘আমি ওই সময় তিন তলা থেকে আমার মাইয়া লইয়া আর আমার বউ পোলাডা লইয়া গাঙ্গে লাফ দেই। মরতে মরতে হাতুইররা (সাঁতরে) পারে উঠছি।’
রাজুর ধারণা, ইঞ্জিনরুম থেকে আগুন মুহূর্তেই লঞ্চের জানালায় টাঙানো বাতাস নিরোধক পর্দায় লেগে যায়। সেখান থেকে দোতলা ও তিন তলায় ছড়ায়। লঞ্চে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিলেন। কেবিনে ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীদের বেশির ভাগই দগ্ধ হয়েছেন।
ঝালকাঠির পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ৩৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুকে ঢাকায় নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। বাকিদের মরদেহ লঞ্চ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কেবিন বয় ইয়াসিন জানান, লঞ্চের নিচতলার পেছনে ইঞ্জিনরুমের পাশের ক্যানটিনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। সেখান থেকে প্রথমে ইঞ্জিনরুমে ও তারপর পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আগুনের ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি করা হয়েছে।