ঝালকাঠির লঞ্চে আগুনে ব্যপক প্রাণহানির ঘটনা স্থান করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গনমাধ্যমে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা লঞ্চে আগুনের ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বাংলাদেশে লঞ্চে আগুনে কমপক্ষে ৩২ প্রাণহানী’ শিরোনামে তারা জানিয়েছে, ৩২ জনের মৃত্যুর খবর ছাড়াও লঞ্চটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী থাকার কথা জানায়। এছাড়াও তাদের প্রতিবেদনে রূপগঞ্জের ফুড কারখানার আগুনে ৫২ জনের এবং পুরান ঢাকায় আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল মজুদে আগুন লেগে ৭০ জন প্রানহানীর ঘটনাটাও উল্লেখ করেছে।
স্থানীয় সুত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন করেছে বিবিসিও। কমপক্ষে ৩০ জনের প্রাণহানির খবর জানিয়েছে তারা। এছাড়াও আরও ১শ জন আহত হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে। বিবিসি বলছে, এই ধরনের লঞ্চ দুর্ঘটনা বাংলাদেশে দূর্লভ নয়। পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকা, নিম্নমানের রক্ষণাবেক্ষন ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইকে দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি স্থানীয় পুলিশের সূত্র দিয়ে ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর জানাচ্ছে। ইঞ্জিন রুমেই আগুনের সুত্রপাত, এমনটাই জানিয়েছে তারা। এছাড়াও ৩১০ জনের ধারনক্ষমতা সম্পন্ন লঞ্চে ৫০০ জন যাত্রী বহন করার বিষয়টিও উঠে আসে তাদের প্রতিবেদনে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আহত প্রায় শতাধিক যাত্রীকে বরিশাল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
তুরস্কের দৈনিক ডেইলি সাবাহও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন করেছে। তারা জানাচ্ছে, এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছেন ৭২ জন। অগ্নি নির্বাপন বিভাগের কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনের বরাতে জানানো হয়, লঞ্চে ৮০০ জন যাত্রী ছিল। আগুন লাগার কারণ ও উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি। ১৩০ টি নদীর দেশ বাংলাদেশের গনপরিবহনে লঞ্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও নিয়ম শৃঙ্খলায় শিথিলতার কারণে দেশটিতে লঞ্চ দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিতই ঘটে।
ফরাসী সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোর ও জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেও তাদের প্রতিবেদনে ৩২ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশে লঞ্চ দুর্ঘটনাকে খুবই নিয়মিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছে ডয়েচে ভেলে।
এদিকে সর্বশেষ তথ্যমতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুনে মৃতের সংখ্যা ৩৭।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা মো. রায়হান নিউজবাংলাকে জানান, রাত ৩টা ২৮ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস খবর পায়। ৩টা ৫০ মিনিটে ১৫টি ইউনিট আগুন নেভানো শুরু করে। সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঝালকাঠির পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে।
লঞ্চে আগুনের ঘটনা তদন্তে তিনটি কমিটি করা হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি তিনটি করা হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান নিউজবাংলাকে জানান, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহমেদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।