রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বড়বাড়ি বাজার পর্যন্ত গ্রামের পাকা সড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র দেড় কিলোমিটার। সড়কটি দিয়ে যান বলতে বেশির ভাগই মোটরসাইকেল আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। তবে সেই সড়কেই রয়েছে ২১টি গতিরোধক।
রংপুর সিটি করপোরেশনের সড়কটি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পনা ছাড়া স্থাপন করা উঁচু উঁচু এসব গতিরোধকই পথচারীর জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বড়বাড়ি বাজার যেতে সড়কের প্রবেশপথেই প্রায় ৪ ইঞ্চি উঁচু একটি বড় গতিরোধক দেয়া হয়েছে। এর ঠিক কাছেই দেয়া হয়েছে আরেকটি গতিরোধক। এভাবে পুরো সড়কে কোথাও ৫০ ফুট, কোথাও ১০০ ফুট দূরত্বে বসানো হয়েছে গতিরোধক।
সড়কের পাশে পাঁচ-সাতটি দোকান থাকলেই তার দুই পাশে দেয়া হয়েছে গতিরোধক। বাড়ি, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনার সামনে ইচ্ছামতো দেয়া হয়েছে গতিরোধক। রং না থাকায় গ্রামীণ সড়কে গতিরোধকগুলো রাতে বোঝার উপায়ও নেই।
ঝুঁকি এড়াতে তাই পথচারী, মোটরসাইকেলচালকরা গতিরোধক এড়িয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে চলাচল করছেন।
বড়বাড়ি সড়কের মরিচটারী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘনঘন এই বিটগুলো দিচে, এত বিটের তো দরকার নাই। মেলা জাগাত বিট দিচে। ফাঁকা জাগাতো আছে। প্রায় রাইতোত মোটরসাইকেল উল্টি পড়ে। সাইকেল চালাইতে চালাইতেও পড়ি যায়।’
অটোরিকশাচালক মো. হেলাল বলেন, ‘এত উঁচে উঁচে বিট দিচে, গাড়ি তোলায় যায় না। বিটের কাচোত আসি স্লো করা লাগে। যখন বিট থাকি গাড়ি নামে তখন ধেক্কোত করি ওঠে...। যাত্রী কমরোত (কোমর) ব্যথা পায়। গাড়ির ক্ষতি হয়। এইলে যে দিচে, তাতে কী হইচে....। এক্সসিডেন্ট বন্ধের জন্যে দিচে, কিন্তু একোন বেশি এক্সিডেন্ট হয়।’
যত্রতত্র গতিরোধক থাকায় নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। ছবি: নিউজবাংলা
আরেক অটোচালক মহসিন আলী অভিযোগ করেন, এত উঁচু করে গতিরোধক দেয়া হয়েছে, অটোরিকশায় প্রসূতিরা থাকলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু বিট চলন্ত অবস্থায় বোঝা যায় না। এতে আমাদের সমস্যা হয়। গাড়িভর্তি যাত্রী থাকলে বিট পার হওয়ার সময় ঝাঁকি লাগে। নির্দিষ্ট জায়গায় বিট থাকলে যানবাহন চলাচলে সুবিধা হয়। আবার দূর থেকে আসা চালকরা রাস্তা অপরিচিত হওয়ায় কোথায় বিট আছে তা তারা বুঝতে পারেন না।’
সড়কের পাশে থাকা একাধিক ব্যক্তি নিউজবাংলাকে জানান, অপরিকল্পিত এসব গতিরোধকের কারণে সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় মোটরসাইকেলচালকরা।
সোলেমান আলী নামে এক মোটরসাইকেলচালক বলেন, ‘বিটগুলো যে উঁচু করে এবং ঘনঘন দিছে তাতে করে ব্রেক করতে করতে উল্টে পড়তে হয়। আর রাতে তো সড়কে এগুলো আছে কি না তা দেখা যায় না। কোনো মোটরসাইকেলচালক এই সড়কে প্রথম গেলে অবশ্যই দুর্ঘটনার কবলে পড়বেন। এর দায় কে নেবে?’
মেহেদী হাসান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ম মেনে গতিরোধক দেয়া হলে যানবাহন ও যাত্রী উভয়ই নিরাপদ থাকত। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যাগ নেয়া দরকার।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর রংপুর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ মাহমুদ বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অবশ্যই গতিরোধক থাকতে হবে। কিন্তু সেটি হতে হবে নিয়মমাফিক। যত্রতত্র, যেমন খুশি তেমনভাবে দিলে দুর্ঘটনা বাড়বে।
‘বিশেষ করে সড়কে গতিরোধক আছে রাতের বেলায় সেটি বোঝাতে অবশ্যই সাদা রংসহ জেব্রা চিহ্ন ও বিভিন্ন নির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা কমবে না, বাড়বে।’
এতগুলো গতিরোধক কারা বসিয়েছে সে তথ্য নেই সিটি করপোরেশনের কাছেও। ছবি: নিউজবাংলা
সড়কটিতে এতগুলো গতিরোধক কীভাবে কারা বসিয়েছে তার কোনো তথ্য নেই খোদ রংপুর সিটি করপোরেশনের কাছেও।
সড়কে এভাবে গতিরোধক দেয়ার নিয়ম নেই জানিয়ে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কাজটি আমরা রংপুর এলজিইডিকে দিয়ে করিয়েছি। যখন সড়কটি করা হয় তখন স্থানীয়দের চাপে এগুলো দেয়া হয়েছে।
‘আমরা দিতে চাইনি। এ জন্য স্থানীয়রা সড়কে অবস্থানও নিয়েছিল বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে।’
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।