ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লিঙ্গভেদে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে এমন অভিযোগ তুলেছেন হলে থাকা ছাত্রীরা। একই সঙ্গে ছাত্র হলের সঙ্গে মিলিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব একই ধরনের নিয়ম করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি ছাত্রী হল সংসদের সাবেক শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী এ দাবি জানান।
এ সময় লিখিত বক্তব্য পড়েন শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক সহসভাপতি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ওঠার সময় ২৭টি ধারার একটি অঙ্গীকারনামায় সই করতে হয়।
এসব নিয়ম শুধু পাঁচটি ছাত্রী হলে কার্যকর। বাকি ১৩টি ছাত্র হলে ওঠার সময় কোনো অঙ্গীকারনামায় সই করতে হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি হলেও প্রতিটি হলে কেন আলাদা নিয়ম থাকবে- সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইমি।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি আবাসিক হলে একই নিয়ম চাই। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ১৮টি হলের নিয়ম জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে সংশোধন করতে হবে। একই সঙ্গে সব হলের জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব ও যুগোপযোগী অভিন্ন নিয়ম করার জোর দাবি জানাচ্ছি। লিঙ্গভেদে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক নিয়মে আমাদের ফেলবেন না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে অন্তঃসত্ত্বা ও বিবাহিত ছাত্রীদের থাকতে না দেয়ার বিধি বাতিলসহ চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের এই অংশটিই সর্বপ্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেয়।
বুধবার প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় অন্তঃসত্ত্বা ও বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ছাত্রীদের বাকি তিন দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। ওই দাবিগুলোও দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তারা।
ইমি বলেন, ‘ছাত্রী হলগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ প্রশাসন করে আসছে, আমরা তার অবসান চেয়েছি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই উপাচার্য স্যারের কাছে আমাদের চার দফা দাবি আমরা পেশ করেছিলাম, যার প্রত্যেকটিই আমাদের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
‘আমাদের প্রথম দাবিটি বুধবারের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে মেনে নেয়া হয়েছে, কিন্তু বাকি তিনটি দাবি মানা হয়নি। বাকি দাবিগুলোও নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণেরই প্রতিফলন। তাই আমরা আমাদের প্রত্যেকটি দাবির বাস্তবায়ন চাই।’
ছাত্রীদের বাকি তিন দাবি হলো
# শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় সব ছাত্রী হলে ‘লোকাল গার্জিয়ান বা স্থানীয় অভিভাবকের’ বদলে ‘ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট বা জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি চালু করা।
# আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দ্বারা যেকোনো ধরনের হয়রানি এবং অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
# শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে ঢোকার অধিকার পুনর্বহালের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে অবস্থান করতে দেয়া।
এসব দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন। কোথায় কী কী করছে.. করবেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো উম্মুক্ত।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেন, ‘তবে আমাদের কাছে কেউ আসলে আমরা সেগুলো দেখব। ইতিবাচক, ভালো এবং প্রগতিশীল যেকোনো বিষয়কে আমরা বিবেচনায় নেব এবং সে বিষয়টির ভিত্তিতে যা করার করব। কারণ, আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফসানা ছপা, সহসাধারণ সম্পাদক ফাতিমা তাহসিন, সাহিত্য সম্পাদক অরনিমা তাহসিন, কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক রিপা কুণ্ডু, সাবেক সংস্কৃতি সম্পাদক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, আবাসিক শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা এবং অর্ণি আনজুম।