বিচ্ছিন্নভাবে কোনো দেশ উন্নয়ন করতে পারে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অংশীদার হতে মালদ্বীপের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ায় বাণিজ্যেরে ক্ষেত্রে কিছু সহযোগিতা বঞ্চিত হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার পাশাপাশি নতুন বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
মালদ্বীপের সংসদ ‘পিপলস মজলিশ’-এ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে দেশটির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের ৪১১ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ৩৪টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হয়।
‘উন্নয়ন তার নিজস্ব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমরা কিছু সুবিধা ভোগ করতাম। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় আমাদের সে সুবিধাগুলো প্রত্যাহার হয়ে যাবে। এরপর আমরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হব, তা মোকাবিলায় বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রযুক্তি-চালিত সমাজ এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টার কথাও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবীর কোনো দেশ বিচ্ছিন্নভাবে উন্নতি করতে পারে না। মহামারি কোভিড-১৯ আমাদের শিখিয়েছে, পরস্পর নির্ভরশীল এবং একটি উন্নত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গঠনের স্বার্থে আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় আমাদের নীতিগত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি; যা আমাদের জাতির পিতা চেয়েছিলেন। আপনাদের উন্নয়ন যাত্রা, এলডিসি থেকে মধ্য আয়ের দেশে আপনাদের সফল রূপান্তর দেখতে আমরা বিশেষভাবে উৎসাহী। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ এই অর্জনকে কাজে লাগাবে।’
বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। মালদ্বীপের সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সুবিধার জন্য আগামী পঞ্চাশ বছরের উন্নয়ন যাত্রায় আমাদের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানাই।’
‘চলতি বছর বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের বন্ধুত্বের বিশেষ সময়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংযোগ, পর্যটন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে পারব।’
মালদ্বীপের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগ এবং তার দূরদর্শী রাজনীতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বক্তব্যে উঠে আসে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বের কথা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছোট বোনসহ আমি দেশের বাইরে থাকায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যাই। ছয় বছর দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছি। বাংলাদেশে ফিরে কারাবাস, হত্যাচেষ্টার শিকারসহ অনেক প্রতিকূল অবস্থা সহ্য করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ এটা আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি যে বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশংসা অর্জন করেছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে।
‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশ গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত কয়েক বছরে গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি ছিল। ২০১৯-২০ সালে মহামারি শুরুর ঠিক আগে আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
‘গত এক দশকে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, গড় আয়ু, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, স্যানিটেশন, পানীয় জল, প্রাথমিক শিক্ষা ও সাক্ষরতাসহ আর্থসামাজিক সূচকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন যাত্রার ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছি। ২০৩১ সালের মধ্যে এসডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে পরিণত হওয়া আমাদের লক্ষ্য।’