বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শীতে আসে পাখিরা, ভোটের সময়ে প্রবাসীরা

  •    
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:০১

জগন্নাথপুরের ভবেরবাজার এলাকার বাসিন্দা শফিক আহমদ বলেন, ‘শীতে হাওরে যেমন অতিথি পাখিরা আসে, তেমনি ভোট এলে অনেক প্রবাসী আসেন। তারা ভোটে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। অনেকে ভোটের পর পরই আবার প্রবাসে চলে যান। এমনকি নির্বাচিত হলেও অনেককে বেশির ভাগ সময় এলাকায় পাওয়া যায় না।’

হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জ দেশের অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত জনপদ। জীবনমানের সব সূচকেই পিছিয়ে এই জেলার বাসিন্দারা। তবে ব্যতিক্রম জগন্নাথপুর উপজেলা।

সুনামগঞ্জের এই উপজেলা প্রবাসীবহুল। প্রবাসীদের বেশির ভাগই আবার যুক্তরাজ্যে থাকেন।

শীত মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরগুলোয় বিপুলসংখ্যক অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। টাঙ্গুয়া, দেখার হাওর, শনির হাওরগুলোয় এখন পাখিদের সমারোহ। সাইবেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে তারা।

একইভাবে ভোটের সময় এলেও জগন্নাথপুরে প্রবাসীদের সমাগম ঘটে। তাদের কেউ কেউ প্রার্থী হন, অনেকে অংশ নেন প্রচারে। আর যারা আসতে পারেন না তারা পাউন্ড-ডলার পাঠিয়ে বন্ধু-স্বজনদের নির্বাচনের ব্যয় জোগান।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই প্রবাসী প্রার্থীদের আধিক্য। আগামী ২৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাত ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৭ জন। তাদের মধ্যে ২০ জনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

জগন্নাথপুরের ভবেরবাজার এলাকার বাসিন্দা শফিক আহমদ বলেন, ‘শীতে হাওরে যেমন অতিথি পাখিরা আসে, তেমনি ভোট এলে অনেক প্রবাসী আসেন। তারা ভোটে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। অনেকে ভোটের পর পরই আবার প্রবাসে চলে যান। এমনকি নির্বাচিত হলেও অনেককে বেশির ভাগ সময় এলাকায় পাওয়া যায় না।’

উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ আবুল হাসান। প্রবাস থেকে এসে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পেটের দায়ে আমরা বিদেশ গেলেও মন দেশের মাটিতই আছিল। বিদেশ থাকলেও ইউনিয়ন উপজেলার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছিল, প্রতিনিয়ত দেশও আওয়া-যাওয়ার কারণে তারার লগে আমার সম্পর্ক অইগেছে। জনগণ চাইছে আর দলও আমারে নৌকা দিসে। তাই আমি ইলেকশন কররাম।’

এই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তাদের সবাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। আবুল হাসান ছাড়াও মকসুদ কোরেশী, আজহার কামালী, মুকিতুর রহমান যুক্তরাজ্য থেকে এসে প্রার্থী হয়েছেন।

কলকলিয়া ইউপির তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে রফিক মিয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী। চিলাউড়া হলদিপুর ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল মমিন, এলাইছ মিয়া ও মুজিবুর রহমান যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

এ ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল গফুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া শহিদুল ইসলাম দেশে থাকলেও তাদের ছেলেরা বিদেশ থেকে এসে প্রচারে নেমেছেন। এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আরশ মিয়াও যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

রানীগঞ্জ ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছালিক মিয়া, মজলুল হক ও সিরাজুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। এ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছদরুল ইসলাম, বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম, বিএনপির নেতা আমান উল্যাহ প্রবাসী না হলেও তাদের সমর্থনে স্বজনরা প্রবাস থেকে দেশে এসে প্রচারে অংশ নিয়েছেন।

এ ছাড়া আশারকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুস ছাত্তার। এ ইউনিয়নের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী জমিরুল হক ও আহমেদ হোসেনও যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

পাইলগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী মখলুছ মিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী ফারুক আহমেদও যুক্তরাজ্য প্রবাসী। এ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুন্দর উদ্দিন প্রবাসী না হলেও তার ছেলে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসে বাবার নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়েছেন।

সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী মকসুদ কোরেশী বলেন, ‘দুই বছর ধরে নির্বাচন করার জন্য স্থানীয়রা আমাকে বলছে। প্রতি চার-ছয় মাস পরপর দেশে এসে আমি গ্রামের মানুষের খোঁজখবর নিয়েছি। তাদের সুখ-দুঃখে থেকেছি। আর এখন তাদের ইচ্ছাই আমি প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচন কেন্দ্র করে আমার আত্মীয়রাও দেশে ফিরছেন।’

রানীগঞ্জ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছালিক মিয়া বলেন, ‘দেশে না থাকলেও সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। অবহেলিত মানুষরাই আমাকে নির্বাচনে নিয়ে এসেছে, আমিও তাদের পাশে থাকব।’

প্রবাসীদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা রেজুওয়ান কোরেশী বলেন, এটি প্রবাসী-অধ্যুষিত উপজেলা, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই বছর ধরেই তাদের আসা-যাওয়া নিয়মিত ছিল এবং এখন নির্বাচন কাছে চলে আসায় তাদের পরিবারের লোকজন, আত্মীয়রাও দেশে আসা শুরু করেছেন, গ্রামে গ্রামে এখন উৎসবের আমেজ।

এ বিভাগের আরো খবর