বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ চায় সিপিডি

  •    
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:৩৯

সিপিডি বলছে, করোনার কারণে নতুন করে যে আড়াই কোটি লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে এসেছে তাদের জন্য কোনো সুবিধা নেই। একটি স্বচ্ছ তালিকা করে তাদেরকে একটি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনতে বলেছে গবেষণা সংস্থাটি।

করোনা পরবর্তী অর্থনীতিতে পরিবর্তন দৃশ্যমান। তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া যথেষ্ঠ মাত্রায় টেকসই হচ্ছে না। পুরোমাত্রায় অর্থনীতিকে সচল রাখতে নতুন করে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি পরামর্শ রেখেছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসের অর্থনৈতিক অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে সুযোগ কমছে। অর্থায়নের উৎসগুলো সংকুচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের মধ্যে সারের দাম বাড়াতে হতে পারে। এটা করা হলে সরকারের ভর্তুকি ব্যাপক বাড়বে। আবার গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। পোশাক পণ্যের রপ্তানি বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়েনি। এতে রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ বাড়ছে।

সামনের দিনগুলোতে এগুলো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে সিপিডি। সংগঠনটির মতে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করতে পারলে নতুন বছরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের অন্তবর্তীকালীন পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সিপিডির নিবার্হী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অক্টোবরের তথ্য প্রকাশ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নভেম্বরের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আমদানি, রপ্তানি, রাজস্ব পরিস্থিতি, লেনদেনের ভারসাম্য, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, পোশক খাতের অবস্থা, শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি ও বাস্তবায়নাধীন প্রণোদনা প্যাকেজসহ অর্থনীতির নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।

সিপিডি বলেছে, অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আয়ের অবস্থা ভালো হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু দূরে। ২০২১-২২ অর্থবছরের চার মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ। বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করতে হলে অন্তত ৩০ শতাংশ হারে আদায় করতে হবে।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়লেও তা লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে বলে জানিয়েছে সিপিডি। আর এ কারণে নতুন করে কর্মসংস্থান হচ্ছে না বলেও মনে করছে গবেষণা সংগঠনটি।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, সুদ হার কমানো এবং নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেয়ার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি গত বারের একই সময় তুলনায় কমে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখীর কারণে সাধারণ জনগণের জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং সুশাসের অভাবে এমনটি হয়েছে।

২০২০ সালের জুন থেকে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। তাদের মতে, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা বাজারে আসায় ও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

যে পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি নিরূপণ করা হয় তাতে গলদ আছে জানিয়ে সঠিক মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণে নতুন করে হিসাব করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও শক্তিশালী করারও প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।

পাশাপাশি ডিজেলে দাম কমানো এবং জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিপিডি বলেছে, ডিজেলের দাম কমানো হলে পণ্য মূল্যের উৎপাদন খরচ কমবে। ফলে পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে তার ৮৭ শতাংশ ব্যাংক ঋণনির্ভর। এই ঋণের বেশির ভাগ পেয়েছে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছোটরা কম সুযোগ পেয়েছে বড়দের তুলনায়। এ জন্য নীতি-সহায়তার দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়েছে।

গবেষণা সংস্থাটি বলেছে, গরিবদের জন্য এককালীন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ যে টাকা বিতরণ করা হয়েছিল, তাতে সুবধিাভোগী সবাইকে দেয়া হয়নি। ৫০ লাখের মধ্যে ৩৬ লাখ এই সুবিধা পেয়েছে।

সিপিডি বলছে, করোনার কারণে নতুন করে যে আড়াই কোটি লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে এসেছে, তাদের জন্য কোনো সুবিধা নেই। স্বচ্ছ তালিকা করে তাদেরকে একটি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনতে বলেছে গবেষণা সংস্থাটি।

সিপিডির মতে, নতুন করে যে প্রণোদনা প্যাকেজ নেয়া হবে তাতে নতুন করে দরিদ্র হওয়াদের অগ্রাকিার দিতে হবে। নীতি-সহায়তার পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্রদের প্রাধান্য দেয়া উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে পুঁজিবাজারও প্রসঙ্গও। সিপিডির মতে, বাজারে বড় বড় খেলোয়াড় আছে। তারা কারসাজি করে বাজারকে প্রভাবিত করছে। পূঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং বাজারে নতুন আইপিও আনার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

সিপিডি বলেছে, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান আসার পর বাজার উন্নয়নে অনেক ভালো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, কিন্তু গতিশীল বাজারের জন্য আরও সংস্কার করতে হবে। তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে এক ধরনের লুকোচুরি চলছে। এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা না বাড়াতে পারলে নতুন বছরে অথনৈতিক ব্যবস্থাপনা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

খাদ্যপণ্য চালের চাহিদা নিরূপণে পুনমূল্যায়নের পরামর্শ দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। আর পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে জিডিপির প্রাক্কলন নিয়ে কিছু বলা হয়নি কেন, এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌহিদ বলেন, ‘পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই। সে জন্য হিসাব করা হয়নি।’

তাহলে আইএমএফ কীভাবে করছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওদের ক্ষমতা আছে অলৌকিকভাবে হিসাব করার। আন্দাজের ওপর বলেছে। প্রশ্নটা আইএমএফকে জিজ্ঞেস করুন। তথ্য-উপাত্ত না থাকলে নীতি ভ্রান্ত হতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর