বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদ হারানো মো. শাহনেওয়াজ শাহানশাহ মাদকাসক্ত বলে জানিয়েছে র্যাব। বাহিনীটি বলেছে, অনুষ্ঠানে আগে ফুল দিতে না পারার ক্ষোভ থেকে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার গায়ে হাত তুলেছিলেন তিনি।
রাজধানীর উত্তরা-৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল ডি মেরিডিয়ানে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার শাহনেওয়াজকে গ্রেপ্তারের পর ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় বাহিনীটি। তাদের দাবি, শাহনেওয়াজ নিয়মিত মাদক সেবন করতেন।
রাজধানীর উত্তরা-৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল ডি মেরিডিয়ানে অভিযান চালিয়ে সকাল ১০টার দিকে শাহনেওয়াজকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল। এ সময় তার কাছ থেকে মাদক ও নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।
শাহনেওয়াজকে গ্রেপ্তারের পর এ বিষয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্রিফিংয়ে আসেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, সদ্য বহিষ্কৃত মেয়র শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে জামালপুরে একটি মামলা হয়েছে। এর পরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তাকে নজরদারিতে রেখেছিলেন র্যাবের গোয়েন্দারা। শাহনেওয়াজ বুধবার রাতে ডি মেরিডিয়ান হোটেলের একটি কক্ষ ভাড়া নেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই তথ্য পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। আটক করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে চর মারার কথা শিকার করেছেন শাহনেওয়াজ। আগে ফুল দিতে না পারার ক্ষোভ থেকেই তিনি এ কাজ করেছিলেন।’
অভিযানে শাহনেওয়াজের কাছ থেকে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, তিনি নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। তার কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বহিষ্কৃত মেয়র শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তথ্য পেয়েছে র্যাব। সেই সঙ্গে নানা সময় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাকে জামালপুর থানায় হস্তান্তর করা হবে।
শিক্ষা কর্মকর্তাকে চড়-থাপ্পড়ের অভিযোগে গত মঙ্গলবার দেওয়ানগঞ্জ পৌর মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর আগের দিন তাকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকেও। শাহনেওয়াজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
যা হয়েছিল বিজয়ের অনুষ্ঠানে
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, বিজয় দিবসের সকাল পৌনে ৭টার দিকে দেওয়ানগঞ্জ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছিলেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী তিনি একে একে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডাকছিলেন।
মেহের জানান, তালিকার এক নম্বরে ছিল উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), দেওয়ানগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌরসভার মেয়রকে ডাকা হয়।
মেয়র শাহনেওয়াজ শ্রদ্ধা জানানো শেষে তাকে বলেন, ‘আমি ৫ নম্বরে কেন? আমি তো ১ নম্বরে যামু।’
মেহেরের অভিযোগ, এ কথা বলেই মেয়র তাকে চড় মেরে দ্রুত শহীদ মিনার এলাকা ছাড়েন।
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থাপনা করার সময় আমি শহীদ মিনারের বেদিতে ছিলাম। নাম ঘোষণার সিরিয়াল নিয়ে মেয়র তাকে লাঞ্ছিত করেছেন।’
শিক্ষা কর্মকর্তার অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র জানান, ওই কর্মকর্তা সাবেক শিবির ও বিএনপির নেতা ছিলেন। তার ছোট ভাই এখন জামালপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং পূর্বপরিকল্পিত।