দেশে প্রথমবারের মতো লবণ ও জলমগ্নসহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।
ময়মনসিংহে বিনা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকও উপস্থিত ছিলেন।
এই জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে লবণ ও জলমগ্নসহিষ্ণু ধান গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, বিনা ও বাকৃবির যৌথ এ গবেষণায় বিভিন্ন মাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মিউট্যান্ট সৃষ্টি করে তা থেকে নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এম সিক্স জেনারেশনের ৩টি উন্নত মিউট্যান্ট শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত মিউট্যান্টগুলো প্যারেন্ট অপেক্ষায় উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং ৮ ডিএস/এম মাত্রার লবণাক্ততা ও ১৫ দিন জলমগ্ন অবস্থায় ঠিকে থাকতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, বিনা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আরোপিত মিউটেশনের মাধ্যমে ফসলের নানা জাত উদ্ভাবন করেছে। এ সমস্ত গবেষণায় আরোপিত মিউটেশনের প্রভাবে ফসলের ফেনোটাইপের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখে উন্নত জাত শনাক্ত করা হতো কিন্তু জিনোমের কোথায় ডিএনএ বিন্যাসের পরিবর্তনের জন্য এমন কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হলো তার ব্যাখা দেয়া সম্ভব হতো না। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে এই গবেষণায় প্যারেন্ট ও নির্বাচিত তিনটি মিউট্যান্ট ধানের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন হয় যা বাংলাদেশে প্রথম।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আকস্মিক বন্যা ও লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কার্যকরী উপায় হচ্ছে লবণ ও জলমগ্নসহিষ্ণু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে চলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশের ২ মিলিয়ন হেক্টর জমি লবণাক্ত, যেখানে বছরে একটি ফসল হয়। খাদ্যনিরাপত্তা টেকসই করতে ও ভবিষ্যতে খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমরা লবণাক্ত জলাশয় ও হাওড়সহ প্রতিকূল এলাকায় বছরে দুই থেকে তিনটি ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি।
‘পূর্ণাঙ্গ জিনোম উন্মোচনের ফলে লবণ ও জলাবদ্ধসহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ সহজতর হবে’, যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিনার ডিজি ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, বাকৃবির ভিসি অধ্যাপক লুৎফুল হাসান, ব্রির ডিজি শাহজাহান কবীরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।