অবসরে যাচ্ছেন বাংলাদেশে হাইব্রিড আমের জনকখ্যাত বিজ্ঞানী ড. জমির উদ্দিন। বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জমির উদ্দীন ১৯৯৫ সালে তৎকালীন আম গবেষণা কেন্দ্রে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
দীর্ঘ কর্মময় জীবনে ড. জমির উদ্দীন ছয়টি আমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে চারটি হাইব্রিড আম, যার মধ্যে একটি রঙিন হাইব্রিড। এ মাসেই বারি আম ১৮ নামে তার উদ্ভাবিত নতুন হাইব্রিড আমের জাত মুক্তায়িত হয়। এখনও তার হাইব্রিড আম নিয়ে ১৪টি গবেষণা চলামান ছিল, যা অসমাপ্ত রেখেই শেষ হচ্ছে তার কর্মজীবন।
এ ছাড়া তিনি বেশ কিছু টেকসই প্রযুক্তি আমচাষিদের মাঝে সম্প্রসারণ করেছেন, এর মধ্যে বেসিন পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে কৃষক পর্যায়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যানতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম বিভাগে এমএস ডিগ্রি ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড আমের ক্রস বা সংকরায়ন বিষয়ে পিএসডি ডিগ্রি অর্জন করা ড. জমিরের জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর গ্রামে।
গ্রামের সম্ভ্রান্ত গৃরস্থ মহির উদ্দির ম-ল ছিলেন তার বাবা, পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন জমির উদ্দিন। আলিনগর গ্রামে আলিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তার লেখাপড়া শুরু হয়। আলীনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় জমির উদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মধ্যে, তৎকালীন মহাকুমায় বৃত্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছিলেন।
১৯৭৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন, এরপর নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৫ সালে বিএসসি (এজি) স্নাতক পাসের পর ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফার্মিং সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
এখন পর্যন্ত ড. জমির উদ্দিনের ৬০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি কৃষির, বিশেষ করে আমের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন, যা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ড. জমির উদ্দিন জানান, অনেক খুশি যে তিনি দেশকে ছয়টি আমের জাত উদ্ভাবন করে দিতে পেরেছেন। এর ভেতর চারটি হাইব্রিড আমের জাত, আর এর মধ্যে রঙিন হাইব্রিড একমাত্র দেশের রঙিন আম। তার অসমাপ্ত গবেষণা বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে চলমান গবেষণার মধ্যে পাঁচটি জাত খুব প্রতিশ্রুতিশীল মনে হয়েছে তার কাছে। বিভিন্ন জাতের সঙ্গে ক্রস করে হাইব্রিড আমের এ জাতগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিষয়ে আগামীতে মুক্তায়নের হয়তো সিদ্ধান্ত আসবে।
এ বিজ্ঞানী নিরাপদ আমের উৎপাদন বাড়াতে ও কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি আগামীতে এ বিষয়ে কাজ করতে চান বলেও জানান।