এক দিনের ব্যবধানে আবারও সূচকের পতন দেখল বিনিয়োগকারীরা। সূচকের ২ পয়েন্ট পতন হলেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। বুধবারসহ ১০ কর্মদিবসে সূচক বেড়েছে মাত্র দুদিন। বাকি আট দিনই কমেছে।
লেনদেনে এগিয়ে ছিল সাধারণ বিমা, তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্থিক খাতের শেয়ার। দর বৃদ্ধিতে ১৪২টি কোম্পানি থাকলেও দর পতনে ছিল ১৮৬টি।
৭৬৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৫২ কোটি টাকা।
গত এক মাসের লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় অনেকটাই ফারাক দেখা যাচ্ছে। দাম বাড়লেই শেয়ার বিক্রি করা বা সামান্য লাভে শেয়ার বিক্রি করে সে কোম্পানি থেকে বের হয়ে আসার প্রবণতা দেখা গেছে। এতে সূচক স্থিতিশীল হচ্ছে না।
অনেকে বলছেন, ডিসেম্বরের এই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ কোম্পানিকে বছর শেষের হিসাব করতে হয়। ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ে অনেক কোম্পানি তাদের সারা বছরের হিসাব সম্পূর্ণ করে থাকে। বড় বিনিয়োগকারীরা এ সময়টায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে বরং লাভে থাকা শেয়ার বিক্রি করে লাভ-লোকসানের হিসাব করে থাকে।
এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেছেন, ‘সূচক কমছে, এটা সত্য। লেনদেনও আগের পর্যায়ে নেই। এতে কিছুটা আস্থাহীনতা দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ে যে কোম্পানিগুলো আছে, তার মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা বড় বিনিয়োগ করে থাকে তারা পুঁজিবাজারে অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। ফলে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ায় সূচক ও লেনদেনে মন্দাবস্থা দেখা যাচ্ছে।’
বুধবার লেনদেন ব্যাংক খাতের মাত্র পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। দর অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটি কোম্পানির। ২২টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।
নন-ব্যাংক আর্থিক খাতের সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালালি খাতের ১৪টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। বিপরীতে সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে।
বিমা খাতের ৪৫টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। কমেছে মাত্র ছয়টি কোম্পানির।
লেনদেনে এগিয়ে থাকা ১০ কোম্পানি
বুধবার লেনদেনে এগিয়ে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। এদিন কোম্পানিটির ৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে ৫৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭টি শেয়ার। ১৫৫ টাকা ২০ পয়সা দরের শেয়ার দর দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫৬ টাকা ২০ পয়সা।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল সোনালী পেপার, যার ৪৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ৫ লাখ ২৬ হাজার ১০৩টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এ ছাড়া, জিএসপি ফিন্যান্সের শেয়ার দর ২.২১ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৬টি।
সপ্তাহের সোমবার দর বৃদ্ধির পর আবারও টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পতন হয়েছে ব্যাংক খাতের ওয়ান ব্যাংকের। এদিন ব্যাংকটির ২.১৩ শতাংশ দর পতন হয়েছে। ২৪ কোটি ৬ লাখ টাকার মোট ১ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
ফরচুন সুজের দর বৃদ্ধির মাধ্যমে শেয়ার প্রতি যোগ হয়েছে ২ টাকা। এদিন কোম্পানিটির ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ১৭ লাখ ৩ হাজার ৪৬৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৮.৭ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির ১৫ কোটি ৮৪ লাখ কটাকার ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪২৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮ রাখ ৯৪ হাজার ৪৩৭টি।
সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১২ লাখ ৯২ হাজার ৪৫২টি।
এছাড়া ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, আইএফআইসি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, এএমসিএল (প্রাণ), এনআরবিসি ব্যাংকের লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি টাকার বেশি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের সবশেষ চিত্র
দর বৃদ্ধিতে ১০ কোম্পানি
এদিন সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে বিবিধ খাতের সাভার রিফেক্টরিসের। দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া এই কোম্পানির শেয়ার দর ১৮১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯৯ টাকা ১০ পয়সা।
স্টাইল ক্রাফটের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯৩ শতাংশ। ১২৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে শেয়ার দর বেড়ে হয়েছে ১৩৬ টাকা ১০ পয়সা। ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেনে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৭০ শতাংশ। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৩৩ শতাংশ। অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.৬৪ শতাংশ।
সোনালী পেপারের ৬.২৪ শতাংশ শেয়ার দর বৃদ্ধির ফলে ৭৯১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৪০ টাকা ৭০ পয়সা।
তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.২২ শতাংশ। ১৬২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে শেয়ার দর বেড়ে হয়েছে ১৭২ টাকা ৪০ পয়সা।
সুহিৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৬১ শতাংশ এবং জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৩৪ শতাংশ।
দর পতনের ১০ কোম্পানি
বুধবার সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড রিরোলিং কোম্পানি ৬.৪২ শতাংশ। শেয়ার দর ২২১ টাকা থেকে কমে হয়েছে ২০৬ টাকা ৮০ পয়সা।
জিবাংলা সুগার মিলের শেয়ার দর কমেছে ৬.০১ শতাংশ। ন্যাশনাল টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৫.৮৮ শতাংশ। এতে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬৭৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬৩৬ টাকা ৫০ পয়সা।
রেনউইক যজ্ঞেশ্বর কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৫.৬৫ শতাংশ। ৭১ লাখ টাকার ৫ হাজার ৯৫১টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ার দর কমেছে ৫.৩৫ শতাংশ। জিমিনি সী ফুডের শেয়ার দর কমেছে ৪.৩৭ শতাংশ।
রহিমা ফুডের ৩৬১ টাকা ৮০ পয়সা দরের ৪.২০ শতাংশ কমে হয়েছে ৩৪৬ টাকা ৬০ পয়সা।
এ ছাড়া, এদিন দর পতনের তালিকায় ছিল ফার্মা এইড, যার দর কমেছে ৪.০৮ শতাংশ। হামিদ ফেব্রিক্সের দর কমেছে ৩.৯৩ শতাংশ। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের দর কমেছে ৩.৮৪ শতাংশ।