ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণীর পেটের কাঁচি রেখে সেলাই করার ঘটনায় সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়ী করেনি তদন্ত কমিটি।
হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমানের কাছে সোমবার জমা দেয়া প্রতিবেদনে কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করা হয়নি।
সাইফুর রহমান বলেন, ‘বিদেশি কয়েকটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে এ জাতীয় ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচারের সময় আরও সতর্ক থাকতে হবে।’
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০২০ সালের ৩ মার্চ ওই তরুণীর অস্ত্রোপচারের পর পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করে দেয়া হয়।
ওই ঘটনার ৬৪৩ দিন পর গত ১১ ডিসেম্বর একই হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে আনুমানিক ছয় ইঞ্চি লম্বা কাঁচিটি বের করা হয়।
সমালোচনার মুখে ১২ ডিসেম্বর তিন সদস্যের কমিটি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল হাসানকে প্রধান করে গঠিত কমিটির বাকি দুই সদস্য ছিলেন সার্জারি বিভাগের মো. কামরুজ্জামান ও গাইনি বিভাগের অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা।
তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘কার গাফিলতিতে পেটে কাঁচি রাখার ঘটনাটি ঘটেছে, তা শনাক্ত করতে পারেনি কমিটি। তবে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছেন তারা।
‘সেগুলো হলো অস্ত্রোপচারের সময় একজন নার্সকে যন্ত্রপাতির দায়িত্বে নির্দিষ্টভাবে নিয়োজিত করা। পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’
ভুক্তভোগী তরুণী মনিরা খাতুন এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান। বলেছেন, আর কত দিন ভর্তি থাকা লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
মনিরা খাতুনের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামে। ১৮ বছরের মনিরা মেজিনট্রিক ফিস্টজনিত সমস্যা নিয়ে ২০২০ সালের মার্চে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
অস্ত্রোপচারে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে হয় মনিরার। অন্তঃসত্ত্বাও হন তিনি। তবে ভ্রুণ নষ্ট হওয়ায় তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী।
পেটে অসহনীয় ব্যথা শুরু হলে ডিসেম্বরে তাকে মুকসুদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে এক্সেরেতে ধরা পড়ে পেটের মধ্যে থাকা কাঁচিটি।