ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ২৬ ডিসেম্বর ভোট হবে পাঁচটিতে। এই উপজেলার এবার কোনো ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট নিশ্চিতে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়নি কাউকে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশায় বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাও এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেমেছেন নিজ গ্রাম, এলাকা ও গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে।
তবে মন্ত্রীর ঘোষণাকে পাশ কাটিয়ে দলীয় কর্মসূচির নামে অনুষ্ঠান আয়োজন করে একাধিক ইউনিয়নে নির্দিষ্ট চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ। এতে মন্ত্রীর সব প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত মাঠের বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
আবার একাধিক প্রার্থী পোস্টার ও লিফলেটে ক্ষমতাসীন দলের স্লোগান ও বিভিন্নভাবে নিজেদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছেন। কৌশলে কিছু প্রার্থী নিজেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে পরিচয়ও দিচ্ছে।
এরই মধ্যে নির্বাচনি পোস্টারে আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগান ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ এবং দলের নাম ব্যবহার করায় উপজেলার উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আরেক নির্বাচনি সভা করে সমর্থকদের মধ্যে জিলাপি বিতরণের অভিযোগে উত্তর ইউনিয়নে যুবলীগের সমর্থন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ শাহজাহানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর কুমার দাস এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
সোমবার সকালে আজমপুরে পুলিশের ‘এক মঞ্চে সব প্রার্থী’-শীর্ষক অনুষ্ঠানে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তারও তার আলোচনায় এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না থাকলেও মাঠে রাজনীতি ছড়িয়ে দেয়ার কাজটা শুরু করে যুবলীগ।
প্রথমে তারা উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনকে সমর্থন দেয়। একই ভাবে ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশের নামে উত্তর ইউনিয়নে মো. শাহজাহানকে সমর্থন দেয় যুবলীগ।
এ ছাড়া মোগড়া ইউনিয়নের উমেদপুরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে এম এ মতিনকে সমর্থন দেয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। আর উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া লুৎফুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া নিয়ে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মমিন বাবুল বলেন, ‘দক্ষিণ ইউনিয়নের জালাল উদ্দিন উপজেলা যুবলীগের একজন সক্রিয় সদস্য এবং উত্তর ইউনিয়নের মো. শাহজাহান দলের একনিষ্ঠ কর্মী। যেহেতু তারা আমাদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তাই তাদেরকে সমর্থন দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে যেহেতু নৌকা প্রতীক নেই, তাই আমার কোনো ভাই যদি ভোটে দাঁড়ায় তাহলে তাকে সমর্থন দেয়া দোষের কিছু হবে না।’
তবে মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মনির হোসেন অভিযোগ করেন, নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না থাকার পরও কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। প্রকৃত যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা তা করতে পারেন না।
বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ভোটে নৌকা প্রতীক না থাকায় দলীয় কাউকে সমর্থন দেয়াটা আইনমন্ত্রীর দেয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়নি। প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার বিষয়ে যুবলীগ কিংবা ছাত্রলীগ আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শও করেনি।’