বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে তথ্যের অন্ধত্ব চলছে: সিপিডি

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:৩৭

সিপিডির দাবি, বাজেটের আয়, ব্যয় ও ঘাটতি অর্থায়নের তথ্য সরকারি দপ্তরগুলো থেকে যেভাবে পাওয়ার কথা সেইভাবে পাওয়া যায় না। ফলে গবেষকরাও সময়মতো হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছেন না। জনপ্রতিনিধিরা তথ্যের ঘাটতিতে থাকছেন। আছে তথ্যের বিভ্রাটও। এ কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের কার্যক্রমে গুণগত মান মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না।

বর্তমান বাস্তবতায় দেশে এই তথ্যের অন্ধত্ব বিরাজ করছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলছে, বাজেটের আয়, ব্যয় ও ঘাটতি অর্থায়নের তথ্য সরকারি দপ্তরগুলো থেকে যেভাবে পাওয়ার কথা সেইভাবে পাওয়া যায় না। ফলে গবেষকরাও সময়মতো হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছেন না। জনপ্রতিনিধিরা তথ্যের ঘাটতিতে থাকছেন। আছে তথ্যের বিভ্রাটও। এ কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের কার্যক্রমে গুণগত মান মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নে আর্থিক তথ্য ও তথ্য অধিকারের ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন দাবি করে সিপিডি।

এশিয়া ফাউন্ডেশন, সিপিডি ও অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সিপিডি বলছে, এ পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য তথ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষক, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভুমিকা রয়েছে। এ শ্রেণিই তথ্যের অন্ধত্ব থেকে দেশকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারে।

রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সদস্য ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও রয়টার্সের সাবেক ব্যুরো প্রধান সিরাজুল ইসলাম কাদির।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশে তথ্যের অন্ধত্ব বিরাজ করছে। তথ্য যে সহায়ক শক্তি হতে পারে তা সরকার বা সংশ্লিষ্টরা উপলদ্ধি করছেন না। স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে তথ্যের কার্যকারিতার আধুনিক মনোভাবও দেখা যাচ্ছে না, যা উদার বিশ্বের সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এমনকি বাংলাদেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ করোনা অতিমারির প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। এই উত্তরণের পরে দেশ কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সাহায্য পেতে হলে এ ধরনের দেশের ট্রিগার ইন্ডিকেটর থাকতে হবে। ফলে এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার পরিস্থিতি বাংলাদেশের আর্থিক তথ্যের চাহিদা শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়টি মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও কার্যকরণে তা দেখা যাচ্ছে না।’

দেবপ্রিয় বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে প্রয়োজনীয় তথ্য সময়মতো এবং পুরোপুরি সরবরাহ করতে না পারলে সহযোগিতা মিলবে না। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।’

সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘আর্থিক তথ্য সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যমণি। ঐতিহাসিকভাবে আর্থিক নীতি প্রনয়ণে তথ্যেও গুরুত্ব ছিল। যখনই দেখা গেছে অর্থনীতিতে চাহিদা কমে গেছে, তখনই সরকার ব্যয় বাড়িয়ে চাহিদা সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, ‘করোনা অতিমারির সময় বৈশ্বিকভাবে এর ঐক্যমতও হয়েছে। কারণ করোনায় বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। চাহিদা কমে গেছে। এসময় সরকারের ব্যয় বাড়াতেই হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহায়তা কর্মসূচির মধ্যে ব্যয় বাড়াতে হবে। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থের অভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশ সরকারের টাকার অভাব ছিল না।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এসময় ব্যয় করাই বাংলাদেশের মূল সমস্যা ছিল। সক্ষমতার সঙ্গে সঠিক মানুষের কাছে প্রণোদনার টাকা পৌছানো সম্ভব হয়নি। এটুআই প্রকল্প ডিজিটালাইজেশনে অনেক অগ্রগতি করলেও কোন এলাকায় সংক্রমণ কেমন তা বের করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কত প্রণোদনা দেয়া হল, কারা পেল, কত বিতরণ হল তা জনপ্রতিনিধিরাও জানেন না।

‘এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আড়াই হাজার টাকার প্রণোদনার ২০ শতাংশ বিতরণ সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ সঠিক তথ্যের ঘাটতি। প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলায় বিভাজিত তথ্য সরকারের কাছে নেই।’

মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাজেটের আয়, ব্যয় ও ঘাটতি অর্থায়নের তথ্য সরকারি দপ্তরগুলো থেকে যেভাবে পাওয়ার কথা সেভাবে পাওয়া যায় না। ফলে ওপেন বাজেট ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দিনদিন পেছনে পড়ছে। ২০১৫ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৫৬ থাকলেও ২০১৯ এ সেটি কমে ৩৬ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ সামগ্রিকভাবে এই স্কোর দাড়িয়েছে ৪২। এক কথায় তথ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে। বাজেটে কোথায় থেকে কত আয় হচ্ছে, কোথায় কত ব্যয় হচ্ছে, কাদের জন্য কত ব্যয় হচ্ছে এসব তথ্য অর্থ বিভাগ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।’

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘তথ্যের বিভ্রাটও আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যে রাজস্ব আয় দেখাচ্ছে, অর্থবিভাগ দেখাচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম। আগের তুলনায় এই ব্যবধান অনেক বেড়েছে। সরকার কর ছাড়ের মাধ্যমে কত প্রণোদনা দিচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। অন্যান্য দেশে বাজেটের আগেই এই হিসাব করা হয়।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তার প্রকৃত খরচ কত তাও সরকার প্রকাশ করে না। কিন্তু সরকার যা ব্যয় করে তা পুরোটাই জনগণের অর্থ। জনগণের অর্থের হিসাব আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে থাকা উচিত।’

সিপিডি জানিয়েছে, তারা দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নে আর্থিক তথ্য ও তথ্য অধিকারের ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণা করছে। গবেষক, নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকরা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পেতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়েন সেটি তুলে ধরেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর