বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৭টি সেতু টিকে থাকলেও খালটি গায়েব

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৫:১৬

চরপালং এলাকার মো. জয়নাল বলেন, ‘এই জমিতে আমরা সব জিরাত লাগাইতাম। ধান, শৈষ্যা, গম, মুহুরী, আবোর ইরি ব্লকও করতাম। অনেক বছর ধইরা জমির পানি নামে না। জিরাতও করতে পারি না। হুদাহুদি জমি পইড়া রইছে। আর বৃষ্টি বাদলের সময় পানি বাইড়া ঘরের তোন রাস্তাও যাইতে পারি না। সব পানিতে তলাইয়া যায়। খালডা থাকলে আর এমন অইতো না।’

প্রথম দেখায় যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে শুকনো ভূমির ওপর সেতু কেন। একটি-দুটি নয়, পর পর ঠায় দাঁড়িয়ে এমন ৭টি সেতু। সাদা চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় কোন খাল ছিল। অথচ ভরাট জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এসব সেতু জানান দেয় শরীয়তপুর জেলা শহরের উপর দিয়ে এক সময়ের প্রবাহমান পালং-কোটাপাড়া খালটির অস্তিত্বের কথা।

সেতুগুলো টিকে থাকলেও দখল হয়ে গেছে সেতুর উভয় পাশে খালের বিভিন্ন এলাকা। খালটির প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা, আধাপাকা স্থাপনা ও সংযোগ সড়ক। এতে ভেঙে পড়েছে পৌর শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ বাড়ে কয়েকগুণ।

এ ছাড়া খালটি ভরাটের ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে চরপালং ও কোটাপাড়ার বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে। সারা বছর পানিতে তলিয়ে থাকে এখানকার শত শত একর ফসলি জমি। এতে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ফসল উৎপাদন বন্ধ রয়েছে চএসব এলাকায়।

পৌরসভা থেকে খালটি উদ্ধারে বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নেয়া হলেও নানা জটিলতায় আটকে আছে উদ্ধার অভিযান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

শরীয়তপুর পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন, নৌপথে যোগাযোগ ও কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে কীর্তিনাশা নদীর সাথে সংযোগ করে অন্তত ৪০ বছর আগে খনন করা হয় পালং কোটাপাড়া খালটি। ২০ বছর আগেও প্রবাহমান খালটির উপর নির্ভর করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করত এই জনপদের মানুষ। কিন্তু গত ২০ বছরে ধারাবাহিকভাবে ভরাট হয়ে দখল হয়ে গেছে খালটির সম্পূর্ণ অংশ। এখন শুধু সেতুগুলো ছাড়া কোথাও খালের কোন অস্তিত্ব নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশ দিয়ে পালং উত্তর বাজার থেকে কোটাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ৭টি সেতু দৃশ্যমান। তবে সেতুগুলোর কোন প্রান্তেই খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রেমতলা, কোটাপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, চরপালং, ফায়ার সর্ভিস ও চেম্বার অব কামার্স এর সামনে থাকা প্রত্যেকটি সেতুর তলদেশসহ পুরো খাল ভরাট হয়ে গেছে। নির্মাণ করা হয়েছে বানিজ্যিক পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা। খালের পাশে থাকা বিপণিবিতানে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগসড়ক।

চরপালং এলাকার মো. জয়নাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই জমিতে আমরা সব জিরাত লাগাইতাম। ধান, শৈষ্যা, গম, মুহুরী, আবোর ইরি ব্লকও করতাম। অনেক বছর ধইরা জমির পানি নামে না। জিরাতও করতে পারি না। হুদাহুদি জমি পইড়া রইছে। আর বৃষ্টি বাদলের সময় পানি বাইড়া ঘরের তোন রাস্তাও যাইতে পারি না। সব পানিতে তলাইয়া যায়। খালডা থাকলে আর এমন অইতো না।’

খাল ভরাট করা জায়গায় ঘর তোলা লিটন বেপারী বলেন, ‘আমাগো কাগজপত্র আছে। নিজেগো জায়গায়ই ঘর তুলছি। রেকর্ড, পর্চাসহ সব কাগজপত্র আছে। সরকারি খালে দোকান উডাই নাই। খালের জায়গা রাইখ্যা আমরা ঘর উডাইছি। দোকান ঘরের সামনে যে খাল ছিল অহন সবাই ভইরা হালাইছে তাই আমরাও ভরছি।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পৌর শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া খালকে চিহ্নিত করে জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে উপস্থাপণ করা হয়েছে। পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো উদ্ধারের জন্য চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত জেলা প্রশসক রাজস্বকে আহবায়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

‘কিন্তু করোনা মাহামারি ও বিভিন্ন আইনি জটিলতায় উদ্ধার অভিযানের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা না গেলে পৌর শহরের জলাবদ্ধাতা স্থায়ী আকার ধারণ করবে।’

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, ‘জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা শহরে দখল হয়ে যাওয়া খালের তালিকাসহ বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দখলদারদের নাম, পরিচয় এবং দখলীয় সম্পত্তির বিবরণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে।’

আগামি সভায় এসব তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার কথা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর