বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পেঁয়াজ-রসুনের ক্ষেতে পানি, কৃষকের মাথায় হাত  

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৩:২৮

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ ঘুরে দেখেছি। অনেক জমিতে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। যেসব জমির পানি নেমে গেছে সেসব জমি এখনও ভেজা। ফলে ফলনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদ করলে মোট উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া অন্য ফসল হিসেবে ভুট্টা, ধনিয়া ও কালিজিরা চাষাবাদেরও সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কৃষকের কিছুটা ক্ষতি হলেও তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব।’

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে টানা বৃষ্টিতে শরীয়তপুর জেলায় পেঁয়াজ ও রসুনের ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

অনেক জমিতে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। পাশাপাশি শুকিয়ে যাওয়া জমির ফসলে দেখা দিয়েছে মড়ক। এতে উৎপাদন ব্যাহত ও নতুন করে আবাদের সুযোগ না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে জাজিরা উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ পার হলেও জাওয়াদের প্রভাব শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলার ফসলের মাঠে থেকেই গেছে। পানিতে তলিয়ে আছে পেঁয়াজ ও রসুনের ক্ষেত। পানি নেমে যাওয়া জমির ফসলে পচন ধরেছে। এতে থেমে গেছে বেঁচে যাওয়া ফসলের বৃদ্ধি।

এ সময় কয়েকজন কৃষক বলেন, মুনাফার আশায় পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ করতে তারা অনেকেই ধারদেনা করেছেন। জাওয়াদের কারণে ফসলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তা ছাড়া মৌসুমের শেষ সময়ে এসে নতুন করে চাষও সম্ভব না হওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প পথ না পেয়ে দিশাহারা চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৭৩ হেক্টর জমিতে।

এদিকে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। রসুনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭২ হাজার ২০৮ মেট্রিক টন।

এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৭৬০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ এবং ৯৪০ হেক্টর জমির রসুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

জাজিরা উপজেলার বিকে নগরের কৃষক জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, ‘বিশটিডা শ্যাষ হইছে ১০ থিক্কা ১২ দিন অইব। ১০ বিঘা জমিতে পিঁয়াইজ (পেঁয়াজ) লাগাইছি আর ছয় বিঘা জমিতে রসুন লাগাইছি, এইয়া অহন পানির তলে আছে। ওই ট্যাকে কিছু আছে হেইয়া জাগনা আছে। অইয়াও পচতে আছে। জমির পানি হেইচ্চাও কমত্যাছে না।

‘কৃষি ব্যাংক থিক্কা ৭৫ হাজার টাকা ঋণ আনছি। অহন ওই ঋণ শোধ করুম কী দিয়া আর নতুন করাই ফসলই লাগাইম কী দিয়া, ভাইব্বা পাই না।’

পেঁয়াজ চাষি সিরাজ ঢালি বলেন, ‘বিশটিডা আসার পর থাইকাই পিঁইয়াজ-রসুন বলতাছে (বড়) না। ফসলডা আর বাড়বো হইব না। পানি বাঝার (জমার) কারণে অহন এইডা উডাইলেও লাভ নাই আর ক্ষেতে রাখলেও লাভ নাই। উডাইতে নতুন কইরা বদলা খরচ লাগব। আবার না উডাইলে ক্ষ্যাত নষ্ট হইয়া জাইব। কোনো কূলই নাই। যা চালান-পুঞ্জি খাটাইছিলাম, সব শ্যাষ।’

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ ঘুরে দেখেছি। অনেক জমিতে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। যেসব জমির পানি নেমে গেছে, সেসব জমি এখনও ভেজা। ফলে ফলনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে।

‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জরিপ করে আমরা রিপোর্ট পাঠিয়েছি। প্রণোদনা এলে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করব। যেসব জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে কৃষকরা যেন অন্য ফসলের আবাদ করে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদ করা যায়, তাহলে মোট উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া অন্য ফসল হিসেবে ভুট্টা, ধনিয়া ও কালিজিরা চাষাবাদেরও সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কৃষকের কিছুটা ক্ষতি হলেও তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব।’

এ বিভাগের আরো খবর