স্বাস্থ্যবিধি না মেনে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় এবং রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষ মাস্ক না পরেই ভিড় করছেন, রাজনৈতিক সমাবেশেও মাস্ক পরছে না মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
‘ওমিক্রন বিশ্বের ৯০টি দেশে ছড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশেও ধরা পড়েছে, কিন্তু মানুষ মাস্ক পরে না এবং স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না। এজন্য ওমিক্রন বাড়ার আশঙ্কা করছে সরকার। সারা দেশের মানুষ যাতে আগের মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এজন্য জেলা প্রশাসক এবং সিভিল সার্জনদের চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’
দেশে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় জীবন যাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এর মধ্যে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে সরকার। এতে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ অংশ নেন।
এ ছাড়া, ১৮ ডিসেম্বর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে র্যালি করে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ। পরের দিন র্যালি করে বিএনপি। সরকারিভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি থাকলেও রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, ১৬ ডিসেম্বরের সঙ্গে সাপ্তাহিত ছুটি যোগ হয়ে তিন দিনের ছুটি পায় চাকরীজীবীরা। ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছুটে গেছেন অগণিত মানুষ। এক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত।
ছুটির সময় উৎসবে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, ‘ছুটির সময়কালীন উৎসব বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ বাড়াবে। সেই সঙ্গে প্রাণহানির সংখ্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে উৎসবে যোগ দেয়া বহু মানুষের সংস্পর্শ।’
মানুষকে উৎসবে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে টেড্রোস গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘জীবন হারানোর চেয়ে একটি উৎসবের আয়োজন বাতিল করা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত।’
কোভিডের জন্য দায়ী করোনাভাইরাস সার্স কভ টু-এর নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। দেশেও অন্তত দুই জনের দেহে এই ভাইরাস ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণের দেশ বতসোয়ানায় প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টের শুরুতে নাম ছিল ‘বি.১.১.৫২৯’। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দেয় ‘ওমিক্রন’।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি মিউটেশনের মধ্য দিয়ে সার্স কভ টু ভাইরাসের নতুন ধরনটি তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই ধরনটির মিউটেশন হয়েছে ৫০ বারের বেশি।
অত্যন্ত সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও ওমিক্রনের মিউটেশন হয়েছে চার গুণ বেশি। ফলে এটি দ্রুত মানুষকে আক্রান্ত করতে সক্ষম বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
একই সঙ্গে তারা বলছেন, ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হওয়া মানেই সেটি অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী, এমনটি বলার সময় এখনও আসেনি। ‘ওমিক্রন’ নিয়ে গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
বুস্টারর ডোজ: আপডেট হচ্ছে সুরক্ষা অ্যাপ
সর্ব সাধারণের জন্য করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দিতে সুরক্ষা অ্যাপ আপডেট করা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন সীমিত আকারে দেয়া হচ্ছে ফ্রন্টলাইনারদেরকে। টিকা গ্রহণের কার্ড নিয়ে ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনাররা টিকা দিতে পারবেন।
‘৬০ বছরের ওপরে যাদের বয়স এবং ফ্রন্ট লাইনাররা এখন থেকেই তাদের দুই ডোজের টিকার কার্ড নিয়ে গেলে বুস্টার ডোজ দিতে পারবে। এ মাসের শেষের দিকে অ্যাপসের মাধ্যমে তা শুরু হবে আগেরগুলোর মতো। এখন তা নিয়ে কাজ করছে আইসিটি মন্ত্রণালয়।’
আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণের ধারা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোভিড নিয়ন্ত্রণে সফলতার উদাহরণ হয়েছে। এখন যে সংক্রমণ কমে গেছে এটা ধরে রাখতে হবে। সব হাসপাতালে এখন অক্সিজেন সাপোর্ট আছে।
‘১২ থেকে ১৩ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার টার্গেট সরকারের। এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ৩৫ ভাগ মানুষকে। এ পর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ ৭ কোটি ও দ্বিতীয় ডোজ সাড়ে ৪ কোটি মানুষকে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৬০ শতাংশ মানুষকে। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ৩৫ শতাংশ মানুষকে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বুধবার মালে যাবেন সরকারপ্রধান। এই সফরে মালদ্বীপে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি সই হতে পারে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।