বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেলে পড়া ভবনের ১৭ পরিবারের নির্ঘুম রাত

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১২:০৫

আবাসিক ভবন দুটির মালিকদের একজন রিপন দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুই ভবন মিলে মোট ১৭ পরিবার। রাতে আমাদের স্থানীয় স্কুলে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন কাউন্সিলর সাহেব, কিন্তু আমরা চলে গেলে আমাদের জিনিসপত্রের নিরাপত্তা দেবে কে? আমরা সবাই এখানে ছিলাম, এখন ধীরে ধীরে আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যাচ্ছি। সারা রাত কেউ ঘুমায়নি।’

চট্টগ্রামে দুটি মন্দিরসহ চারটি ভবন হেলে পড়ার পর নির্ঘুম রাত পার করেছেন ভবনের বাসিন্দারা। নিজেদের জিনিসপত্রের ওপর নজর রাখতে ভবন ছেড়ে কেউ কোথাও যাননি।

আবাসিক ভবন দুটির মালিকদের একজন রিপন দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুই ভবন মিলে মোট ১৭ পরিবার। রাতে আমাদের স্থানীয় স্কুলে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন কাউন্সিলর সাহেব, কিন্তু আমরা চলে গেলে আমাদের জিনিসপত্রের নিরাপত্তা দেবে কে? আমরা সবাই এখানে ছিলাম, এখন ধীরে ধীরে আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যাচ্ছি। সারা রাত কেউ ঘুমায়নি।’

চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকায় সোমবার দুপুরে চারটি ভবন হেলে পড়ে। কর্ণফুলী নদীর শাখা গুলজার খালে খননকাজ শুরুর পর ভবনগুলো হেলে পড়েছে বলে জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি বহুতল ভবন ও দুটি মন্দির।

বন্দর নগরীর সদরঘাট থানার পার্বতী পুকুর পার এলাকায় সোমবার দুপুর ১টার দিকে প্রথমে একটি ভবন হেলে পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে মাটি দেবে গিয়ে আরও তিনটি ভবন হেলে পড়ে। ঝুঁকিতে রয়েছে খালপারের আরও একাধিক ভবন।

হেলে পড়া চার ভবনের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বিতল ও একটি চারতলা ভবন। এর মধ্যে লোকনাথ মন্দির ও জগন্নাথ মন্দির ভবনও দুটিও হেলে পড়েছে। ভবনগুলোর স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় ফাটল।

ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক কুতুব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আছি। ভবনের বাসিন্দারা ভবনে না থাকলেও ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে চাচ্ছিলেন না। তারা জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

‘তবে এখন অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যাচ্ছেন। আমরা তাদের ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। আর পরিস্থিতি আগের মতোই আছে, তবে চারতলা ভবনটি আগের চেয়ে আরেকটু দূরে সরে গেছে।’

হেলে পড়া ভবন এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা

চারটি ভবন হেলে যাওয়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ওই এলাকার গুলজার খাল খননকে দুষছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজটা সেনাবাহিনীর অধীনে হচ্ছে, তাই তারা ভালো বলতে পারবেন।

‘তবে খাল খননের সময় বিল্ডিং হেলে পড়বে মানে, খালের ওপর তো বিল্ডিং থাকার কথা না। একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ভবন থাকার কথা। খালের ওপর ভবন থাকলে তো তা অবৈধ, সেসব বিষয়েও একটু খোঁজ নেয়া দরকার।’

সিডিএর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রিপন দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আমরা সাত ভাই, আমাদের জমি অল্প অল্প করে। ভবন দুটির একটি ২০০৫ সালে ও অন্যটি ২০১৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল। আমরা ভবন তৈরির সময় সিডিএর অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু তাদের শর্তানুযায়ী ৮ ফুট রাস্তা না থাকায় তারা অনুমতি দেয়নি। এখন আমরা মানুষজন বেশি, সেখানে তো ৮ ফুট রাস্তা হবে না।’

স্থানীয়রা জানান, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খালটি খনন করছে সিডিএ। গত বছর খনন শুরুর কিছুদিন পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

ওই বছরের মার্চেও খালপারের একটি ভবন হেলে পড়েছিল। পরে ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। তখনও সংশ্লিষ্ট খালপারের ভবন মালিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে খনন কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন।

এ বছর কিছুদিন আগে ফের কাজ শুরু করে সিডিএ। রোববার রাতেও কাজ চলছে ওই এলাকায়। এরপর সোমবার দুপুরে মাটি দেবে গিয়ে হেলে পড়তে শুরু করে কয়েকটি ভবন।

পাশাপাশি প্রায় লেগে থাকা ভবন দুটির একটি হেলে পড়ে তৈরি হয়েছে দুই ফুটের মতো দূরত্ব

এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হেলে পড়া আবাসিক ভবনগুলো থেকে ইতিমধ্যে সরে গেছেন কিছু বাসিন্দা। তবে অনেকেই তাৎক্ষণিক ভবন ছাড়তে রাজি হননি। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিধসে একাধিক ভবন ধসে পড়তে পারে।

হেলে পড়া চারতলা ভবনের মালিক রিপন দাশ জানান, গত বছর খাল খনন শুরুর পরই তার ভবন কিছুটা হেলে পড়েছিল। ওই সময় অভিযোগও দেন তিনি। তবে কর্তৃপক্ষ তখন কোনো সাড়া দেয়নি।

স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, এটি অনেক পুরোনো খাল। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এটিতে খননকাজ করছে সিডিএ। হেলে পড়া ভবনগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন তারা।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর