বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জনশুমারি: তৃতীয় দফায়ও ট্যাব কেনার প্রস্তাব ফেরত

  •    
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:৪৭

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের আওতায় ট্যাব কেনার প্রস্তাবটি আরও তথ্য-প্রমাণ দিয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। শুমারির কথা বিবেচনা করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ক্রয় কমিটিতে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। এতে দেশীয় ট্যাব ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে।’

ত্রুটির কারণে প্রথম দুই দফা ফেরত গেছে ট্যাব কেনার প্রস্তাব। সোমবার তৃতীয় দফায় তোলা প্রস্তাবটিও ক্রয় কমিটির অনুমোদন পায়নি। এ অবস্থায় আইনে বেঁধে দেয়া সময়সীমায় জনশুমারি ও গৃহগণনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

কমিটির অনুমোদনের পর ট্যাব হাতে পেলেই ডিজিটাল পদ্ধতির জনশুমারি শুরু করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। তবে এ দফায়ও প্রস্তাব বাতিল করে কমিটি। ফলে আবারও দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেছে জনশুমারির কাজ।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সোমবার তৃতীয় দফায় ট্যাব কেনার প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। কমিটি প্রস্তাবটি বাতিল করে পরের বৈঠকে আবারও প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সময় দিয়েছে। ভার্চুয়াল এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

ট্যাব কেনার প্রস্তাব বারবার ফেরত পাঠানো হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের আওতায় ট্যাব কেনার প্রস্তাবটি ঠিক করে পাঠাতে বলা হয়েছে। শুমারির কথা বিবেচনা করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ক্রয় কমিটিতে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। এতে দেশীয় ট্যাব ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে।

‘রপ্তানি করা পণ্য ব্যবহারের পরিবর্তে আমাদের দেশে যেসব পণ্য তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোই ব্যবহার করতে চাই। এটা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য গৌরবের হবে। তাই বিবিএসকে বলা হয়েছে, আরও তথ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রস্তাবটি পাঠাতে হবে।’

সরকারের তথ্যের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস বিবিএস। সংস্থাটির সবচেয়ে বড় কার্যক্রম জনশুমারি। কিন্তু এবারের ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১’ শীর্ষক প্রকল্পটি বারবার হোঁচট খাচ্ছে। ট্যাব হাতে না পাওয়ায় তা কমপক্ষে তিন মাস পেছাবে এবারের ষষ্ঠ শুমারি। অথচ ২০২১ সালের মধ্যে তা করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে এর আগে কখনই শুমারি এতটা পেছায়নি। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম শুমারি হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে শুমারি করা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, প্রথমে করোনা মহামারির কারণে জনশুমারি পিছিয়ে যায়। পরে ট্যাব কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে তা আরও পেছায়। তবে সব বিষয় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করছি। আশা করছি, দ্রুত সুরাহা হবে। এ বছর আর সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো আগামী মার্চ-এপ্রিলে শুমারি করতে হবে।’

শুরুতে গত ২ থেকে ৮ জানুয়ারি জনশুমারি করার কথা ছিল, যা করোনার কারণে পিছিয়ে যায়। পরে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর করার সিদ্ধান্ত হয়। ট্যাব জটিলতায় তা শুরু করা যায়নি। পরে ২৪ থেকে ৩০ ডিসেম্বর শুমারি সপ্তাহ ধরে জনগণনার পরিকল্পনা করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। সময়মতো ট্যাব না পাওয়ায় তা-ও হচ্ছে না।

ট্যাব না কেনায় বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে জনশুমারি। শুমারির আওতায় ট্যাব কিনতে বিবিএসের সর্বশেষ দরপত্রের শর্ত হিসেবে প্রস্তাব অনুমোদনের পর ট্যাব সরবরাহে কমপক্ষে দেড় মাস সময় লাগার কথা। আবার এসব ট্যাব চালাতে গণনাকারীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যাপার রয়েছে। অর্থাৎ ট্যাব পাওয়ার দুই মাস পর শুমারি শুরু হতে পারে।

জনশুমারি পরিচালনাকারী ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিবিএসের মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুমারির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। ট্যাব কেনার প্রস্তাব সিসিজিপিতে (ক্রয় কমিটি) পাঠিয়েছি। এটা পাস হলে শুমারি শুরুর সময়টা বলা যাবে। যন্ত্রপাতি না পেলে তো আর শুমারি করা যাবে না। কারণ এবারের শুমারিতে ডিজিটালি পদ্ধতিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও তা সংরক্ষণ করা হবে।’

প্রতি ১০ বছর অন্তর জনশুমারি হয়। আগে এর নাম ছিল আদমশুমারি। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনার নাম পরিবর্তন করে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ করা হয়।

নানা সমালোচনার পরও দেশের ষষ্ঠ এ জনশুমারিকে ডিজিটাল শুমারি আখ্যা দিয়ে এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় চার লাখ ট্যাব কিনতে চায় বিবিএস। শুমারি প্রকল্প আগেই অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৩ জুন আহ্বান করা বিবিএসের দরপত্রের ভিত্তিতে ট্যাব কেনার প্রস্তাব প্রথমবার গত আগস্টে ওঠে ক্রয় কমিটিতে। দরপত্রে ‘ত্রুটি’ থাকায় কমিটি পুনরায় দরপত্র আহ্বানে বিবিএসকে নির্দেশনা দেয়। ফের দরপত্র আহ্বান করে তাতে কঠিন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। ২৭ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় পুনঃপ্রস্তাবও বাতিল হয় ত্রুটির অভিযোগে।

নানা অভিযোগ: শুরু থেকেই এ প্রকল্পে ট্যাব কেনা নিয়ে কথা উঠেছে। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে দরপত্রে কঠিন শর্ত আরোপ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। সবশেষ দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বিবিএসকে দরপত্র আহ্বানের দেড় মাসের মধ্যে সব ট্যাব হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দরপত্র খোলার পাঁচ দিন পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাব সরবরাহ শুরু করতে হবে।

এসব শর্তের কারণে মাত্র দুটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে বেশি ব্যয়ের দরদাতাকে কাজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দরপত্রের শর্তে ‘বিগত তিন বছরে শুধু একটি একক চুক্তির মাধ্যমে চারশ’ কোটি টাকার পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকার কথা বলা হয়েছে। এই শর্তের কারণে বেশির ভাগ দেশীয় প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তা ৫০ কোটিতে নামিয়ে আনার কথা বলছে। তাছাড়া চার লাখ ট্যাবই একক লটে কেনার কথা বলা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর