ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগে ‘দলীয় কর্মী’ সিফাত উল্লাহকে হল থেকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভূইয়া সোমবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ওই ঘটনায় গঠন করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ায় তিনি এখন দ্বিতীয় বর্ষে আছেন।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রোকেয়া গাজী এবং আসাদুজ্জামানকে মারধর করেন সিফাত। এ ঘটনায় সে সময় সিফাতকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ২০২০ সালে বহিষ্কারাদেশের মেয়াদ শেষ হয়।
চলতি বছরের ৮ নভেম্বর সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে মারধর করেন সিফাত। পরে এ ধরনের কাজ আর করবেন না বলে ওই দুজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন। এই ঘটনার এক মাসের মাথায় ১৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় ফারসি ভাষা ও সংস্কৃত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী পরশ মিয়াকে হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে ডেকে মারধর করেন সিফাত।কাজী পরশ সেদিন নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের একটি প্রোগ্রামে সিফাত ভাই আমাকে উপস্থিত থাকতে বলেন। আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় যেতে পারিনি।
‘আজ ওনার রুমমেট (মাহমুদ অর্পণ) আমাকে বলেন, আমার কাছে সি-টাইপ চার্জার আছে কি না। আমি বলেছি, আছে ভাই, আমি আপনার রুমে নিয়ে আসছি। চার্জার নিয়ে আমি সন্ধ্যায় ওনার ৩৫১ নম্বর রুমে যাই। সেখানে সিফাত ভাই ছিলেন। এ সময় তিনি প্রোগ্রামে কেন যাইনি জানতে চেয়ে মা-বাবাকে নিয়ে গালাগাল করে আমার শার্টের কলার ধরে চড়থাপ্পড় দেন। ওই সময় আমি যার জন্য চার্জার নিয়ে গিয়েছি, তিনি সিফাতকে আটকান।’
এ ঘটনায় কাজী পরশ হল প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে পরদিন কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে।
কমিটি সোমবার তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক হলের জ্যেষ্ঠ হাউস টিউটর আহমদুল্লাহ বলেন, ‘তদন্তে আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। তাই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হল প্রশাসন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি আর হলে অবস্থান করতে পারবেন না। এর পরও অবস্থান নিলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিনি অ্যাকাডেমিক কাজে হল অফিসে আসতে পারবেন।’ বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে সিফাতকে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় শুনে কল কেটে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘এই অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কোনো পদের অধিকারী নন। পদের অধিকারী হলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সংগঠনকে বিতর্কিত করবে, এই ধরনের কাউকে আমাদের প্রয়োজন নেই। হল প্রশাসনের এই ধরনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এ বিষয়ে হল প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা চাইলে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সামনে ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে যারা নেতিবাচক ঘটনা ঘটায়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সংগঠনে তাদের কোনো ধরনের সুযোগ নেই।’