বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাসহ নানা জঙ্গি হামলায় দণ্ডিত চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেনকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর। একই সঙ্গে অভিজিৎ রায়ের হত্যায় জড়িত এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশেই আছে বলে দাবি করেছে দেশটি।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বেরিয়ে আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন। অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইতিপূর্বে ‘মেজর জিয়া’ নামে পরিচিত সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেনের নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন অনুসন্ধানে।
জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।
সোমবার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণাসহ একটি পোস্টার প্রকাশ করেছে আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট। পরে এই পোস্টারটি সোমবার রাত ৮টার দিকে টুইটারে পোস্ট করে ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ নামে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত একটি অ্যাকাউন্ট।
পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে, আল-কায়েদাভিত্তিক সন্ত্রাসীরা মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায়কে হত্যা এবং তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদকে আহত করে।
অভিজিৎ হত্যায় পলাতকদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত পোস্টার
আরও উল্লেখ করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ছয়জনকে অভিযুক্ত ও দণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশি আদালত। তবে তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া এবং আকরাম হোসেন নামে দুই ব্যক্তি এখনও পলাতক রয়েছেন।
সবশেষে লেখা হয়, ‘হক ও হোসেন কিংবা ওই হত্যায় জড়িত অন্য কারও সম্পর্কে যদি আপনার কাছে কোনো তথ্য থাকে তবে আমাদের কাছে বার্তা দিন।’
সিগন্যাল, টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানোর জন্য +1-202-702-7843 নম্বর এবং @RFJ_USA নামে একটি টুইটার হ্যান্ডলও দেয়া হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। অপর আসামি ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেয়া হয়।
রায়ের সময় জিয়া ও আকরাম ছাড়া অপর চার আসামি কারাগারেই ছিলেন।
পলাতক জিয়া সম্পর্কে জানা যায়, ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টায় ২০১২ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন তিনি।
অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত দুই সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে যান জিয়া। এরপর তিনি যুক্ত হন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে। পরে এর নামকরণ হয় আনসার আল ইসলাম।
পলাতক অবস্থায় জিয়ার পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঘটে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। আনসার আল ইসলামের বেশিরভাগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। অভিজিৎ সহ জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপন এবং সমকামী অধিকার বিষয়ক কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যা মামলায় জিয়ার মৃত্যুদণ্ড হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রায় এক দশকে তারা অন্তত চারবার জিয়ার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় তার অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তবে তাকে গ্রেপ্তারে বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই পালিয়ে যান তিনি।
মেজর জিয়া দেশেই আছেন, নাকি দেশের বাইরে পালিয়েছেন, তা এখনও নিশ্চিত নন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত পুলিশের একাধিক ইউনিটের দায়িত্বশীলরা। তবে তাকে গ্রেপ্তার চেষ্টা কখনই থেমে ছিল না এবং সামনের সময়েও চলমান থাকবে বলে জানান তারা।
Reward! Up to $5 Million for InformationOn Attack Against Americans in BangladeshIn 2015, terrorists killed Avijit Roy and wounded his wife, Rafida Ahmed, in Dhaka, Bangladesh.If you have info on those responsible for this heinous attack, text us at the number below. pic.twitter.com/cB26VVBKve
— Rewards for Justice (@RFJ_USA) December 20, 2021