স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে কূটনীতিতে বঙ্গবন্ধু পদক প্রবর্তন করল বাংলাদেশ। প্রতি বছর একজন বাংলাদেশি ও বাংলাদেশে কাজ করা একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত বা কূটনীতিক এই পদক পাবেন।
প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু পদক পেয়েছেন মেরিটাইম সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম এবং ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সায়িদ মোহাম্মদ আল মেহেরি।
সোমবার দুপুরে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দুজনের হাতে পদক তুলে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন পদক তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতি বছর একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক এবং বাংলাদেশে কর্মরত একজন বিদেশি কূটনীতিককে ধারাবাহিকভাবে ওই পদক দেয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের হাতে দুই ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের মেডেল এবং একটি সাইটেশন তুলে দেয়া হয়।
যুদ্ধ-বন্ধুদের প্রদত্ত স্বর্ণের মেডেলের সোনা চুরির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবর্তিত বঙ্গবন্ধু পদক ইতোমধ্যে অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে পরীক্ষা করা হয়েছে।
যে অবদানের জন্য এ পদক: সরকারি সূত্র জানায়, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলমকে ওই পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়।
সমুদ্রসীমা বিরোধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় বাংলাদেশের ডেপুটি এজেন্ট ছিলেন তিনি। বলা হয়- আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়েরের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারকে অনেকটা উৎসাহিত করেছিলেন তিনি। সমুদ্রে বাংলাদেশের দাবি যথাযথভাবে তুলে ধরা অর্থাৎ সমদূরত্বের পরিবর্তে ন্যায্যতার নীতি অবলম্বনের দাবি আদালতে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব উপাত্ত তিনিই প্রস্তুত এবং সরবরাহ করেন।
বঙ্গোপসাগরে মহীসোপান সংক্রান্ত জরিপ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আদালতে মহীসোপানের দাবি উপস্থাপন তথা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও অসামান্য অবদান রয়েছে খুরশেদ আলমের। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রণীত টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্টটি সংশোধনের উদ্যোগ নেন। আন্তর্জাতিক সি-বে অথরিটির প্রেসিডেন্ট এবং ভারত মহাসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা আইওআরএর চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই ব্যক্তিত্ব।
বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সায়িদ মোহাম্মদ আল মেহেরি ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০-এর ভেন্যু নির্বাচনে দুবাইয়ের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট না দেয়ায় আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো বন্ধ ছিল। রাষ্ট্রদূত মেহেরির আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দফা আমিরাত সফর ছাড়াও দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর সম্ভব হয়।
ব্যাক টু ব্যাক ওই সফরে সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎ খাত এবং বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই রাষ্ট্রদূতের আমলেই ঢাকা-আবুধাবি প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি অনুষ্ঠিত হয়।
সবচেয়ে বড় বিষয়, রাষ্ট্রদূত সায়িদ মোহাম্মদ আল মেহেরি দায়িত্ব পালনের সময়কালেই বাংলাদেশ থেকে আমিরাতে জনশক্তি রপ্তানির দ্বার পুনরায় উন্মুক্ত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন এবং পরবর্তীতে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বমঞ্চে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ওই পদক প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি, আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সমর্থন নীতি বিশ্বদরবারে কেবল প্রশংসিতই নয়, আজ প্রতিষ্ঠিতও।