নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে চার থেকে পাঁচজন যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম দেয়ার কথা জানিয়েছে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে সেই নামগুলো প্রকাশ করতে রাজি হননি দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
সোমবার সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টার সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
সংলাপে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয় রাষ্ট্রপতিকে। এর মধ্যে একটি হলো নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করা, আরেকটি হলো আইন করা না গেলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করা। তৃতীয়ত, সেটিও সম্ভব না হলে সার্চ কমিটির মাধ্যমেই কমিশন গঠন। আর সে জন্যই কয়েকটি নাম দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে এই আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হলো।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০১৭ সালে এই কমিশন দায়িত্ব নেয়। সে সময়ও রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমেই কমিশন গঠন করেছিলেন।
২০১২ সালে রকিব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল।
এই দুটি কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আপত্তি আছে। এবার দলটি রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। সংলাপ শুরুর দিন এই উদ্যোগকে ‘বায়োস্কোপ’ বলে কটাক্ষ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অংশ নিলেও আগামী নির্বাচনের জন্য আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে। এই সরকার গঠনের পর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলছে তারা। তবে এই কমিশন ও সরকারের কোনো রূপরেখা তারা এখনও দেয়নি।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। অন্য নেতারা হলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা।
দুই ঘণ্টা পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা যে তিনটি প্রস্তাব করেছি তার একটি হলো নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করা।’
সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। তবে এখনও কোনো আইন হয়নি। জাপা নেতা বলেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসরণে একটি আইন করা দরকার।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি একজন যোগ্য এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কীভাবে করা হবে, সেটা নির্বাচন কমিশন আইনে সুষ্ঠু ব্যাখ্যা থাকতে হবে; যাতে করে ওই গাইডলাইন নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সে রকম ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করতে পারেন।’
জাপা নেতা জানান, তারা রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, কেবল নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হবে না। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি যে এই বিষয়টি সংবিধানে থাকলেও বাস্তবে আমরা এর বাস্তবায়ন দেখছি না। এ জন্য আমরা মনে করি, সংবিধানের এই বিধানটিকে একটি আইনের আওতায় আনা উচিত। এর পর তারা যদি এ আইন না মানেন, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। তাদের কী ধরনের শাস্তি হবে সেটাও সুস্পষ্টভাবে সেখানে উল্লেখ থাকতে হবে। তাহলে নির্বাচন কমিশন এই শক্তির বলে নির্বাহী বিভাগকে যেকোনো বিষয়ে বাধ্য করতে পারবে।’
সরকার আইন করতে চাইলে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি সহযোগিতা করবে বলেও জানান জি এম কাদের।
নির্বাচন কমিশনের যে মেয়াদ আছে, বাকি সময়ে আইন করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা মনে করি সম্ভব। তবে সরকার যদি মনে করে সম্ভব নয়, তাহলে সম্ভব নয়।’
বিকল্প হিসেবে আরেকটি প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান জাপা নেতা। বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে সংসদ অধিবেশনে এটিকে অনুমোদন করা যেতে পারে।’
যদি অধ্যাদেশও জারি করা না যায় এবং নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে করা হয়, সে ক্ষেত্রে কিছু ‘যোগ্য ও নিরপেক্ষ’ ব্যক্তির তালিকা দেয়ার কথাও জানান জি এম কাদের।
তারা কারা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা প্রকাশ করব না। ...আমরা চার থেকে পাঁচজনের নামের তালিকা দিয়েছি। তারপরও আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আপনি যদি যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নিজেই নিয়োগ করতে চান সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সাজেশন থাকছে।’
রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন- এমন প্রশ্নে জাপা নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমাদের প্রস্তাবগুলো শুনেছেন এবং সেগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।'
রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তার অধীনে ভোটে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব না, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’