বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাষ্ট্রপতির সংলাপে না যাওয়ার ইঙ্গিত বিএনপির

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ২৩:৪৭

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হচ্ছে সোমবার। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা এ সংলাপে কোনোপ্রকার আশা দেখছেন না। এর চেয়ে ‘আন্দোলনের’ জন্য সময় দেয়াকে যৌক্তিক মনে করেন তারা।

নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘সার্চ কমিটি’ গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। যদিও দলটি এখনও সংলাপের জন্য কোনো চিঠি পায়নি। চিঠি পাওয়ার পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা সংলাপে কোনোপ্রকার আশা দেখছেন না। বরং তারা এটিকে সময় নষ্ট বলে মন্তব্য করছেন। এর চেয়ে ‘আন্দোলনের’ জন্য সময় দেয়াকে যৌক্তিক মনে করছেন তারা।

সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে। সংলাপে যোগ দিতে বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে যাবে জাতীয় পার্টির আট সদস্যের প্রতিনিধি দল।

জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে প্রথম আমন্ত্রণ পায় জাতীয় পার্টি। এরপর আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে আগামী ২২ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে যাবে জাসদের প্রতিনিধি দল। জাতীয় পার্টি ও জাসদ দু’দলই নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুসারে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব রাখবে বলে জানা গেছে।

২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠনের সংলাপে অংশ নেয় বিএনপির প্রতিনিধি দল। ফাইল ছবি

বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। এতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)সহ দুই-তিনজন বিশিষ্ট নাগরিক থাকবেন।

বিএনপি মনে করে এই সংলাপ থেকে তারা প্রত্যাশিত কোনো সমাধানই পাবে না। প্রস্তাব যাই রাখা হোক না কেন, আওয়ামী লীগের পছন্দেই নির্বাচন কমিশন গঠন হবে।

শেষ ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই সংলাপে অংশ নিয়ে ফলপ্রসূ কোনো কিছু ঘটেনি দাবি করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দীন সরকার।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এগুলো লোক দেখানো ফরমাল প্রক্রিয়া ছাড়া কিছু নয়। তারা তাদের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তেই সবকিছু করবে। আর বাইরে দেখাবে খুব সংলাপ হচ্ছে, প্রস্তাব নিচ্ছে।

‘মনে করে দেখেন, ২০১৬ সালের কথা। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আমরা গিয়েছিলাম। আমাদের প্রস্তাবিত কাউকে রাখা হয়নি কমিটিতে। তাহলে এই আনুষ্ঠানিক সংলাপ বলেন, প্রস্তাব দেয়া-নেয়া বলেন, এসব সময় নষ্ট।’

বিএনপি এবার সংলাপে অংশ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো এ বিষয়ে কিছু জানি না। কোনো চিঠিও আমরা পাইনি। আর মহাসচিবও সেদিন জানালেন যে, আমরা জানিই না কিছু এ ব্যাপারে। চিঠি পাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তখন জানতে পারবেন।’

সংলাপে গেলে কী প্রস্তাব রাখবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমন্ত্রণই তো পাইনি এখনও। সংলাপে যাচ্ছি কিনা সেটা আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই, প্রস্তাব তো পরের কথা।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলীয় ফোরামে ইতিমধ্যে সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে আলাপ হয়েছে। সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তারা সংলাপে যাবেন না।

তারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি। যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা ইতোমধ্যে বিএনপি জানিয়েছে, সে ক্ষেত্রে আসন্ন সংলাপে অংশগ্রহণ করে সংলাপকে রাজনৈতিকভাবে পরিপুষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই।

দলীয় ফোরামের সেই আলাপে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হাইকমান্ড সবার সম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন গঠনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন পদ্ধতি, এই সরকারের পতন।’

সংলাপে সময় নষ্ট না করে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে মনোনিবেশ করার দাবিও জানান এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের এসব উঠান বৈঠক করে লাভ নেই। আমাদের সামনে পথ একটাই। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। আমাদের সেটির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’

২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ইসি গঠনের সংলাপে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

একই সুরে কথা বলেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দল এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। চিঠি পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, সংলাপে যাওয়া উচিত নয়। আর দলের সিদ্ধান্তও এটাই হবে আমার মনে হয়।

‘২০১৬ সালের সংলাপ থেকে আমরা পেয়েছি নিকৃষ্ট এক নির্বাচন কমিশন। ১৮ সালে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের পর হয়েছে নিকৃষ্ট সব নির্বাচন।’

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন।

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো আইন তৈরি হয়নি দেশে। তবে সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে।

২০১২ সাল থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে চার কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে দেশে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘(১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’

তবে সংবিধানের আলোকে ওই আইন না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। সেই জটিলতা এড়াতে শেষ দুবার সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন হলেও বিতর্ক থামেনি।

গত দুবারের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নতুন বছরের আগেই মধ্য ডিসেম্বরে সংলাপ শুরুর উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি। মধ্য জানুয়ারিতে সংলাপ শেষ হয়। সার্চ কমিটি গঠিত হয় জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। নাম প্রস্তাব ও বাছাই শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সিইসি ও ইসির নাম প্রকাশ করা হয়।

এভাবেই কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব পেয়েছিল।

বর্তমান কমিশন গঠনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে দলগুলো পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করে। সেই নামগুলো বিবেচনায় নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি মোট ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশন গঠন করেন। এবারও সেই পথেই এগুচ্ছে বঙ্গভবন।

এ বিভাগের আরো খবর