বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিটে অপচয় সুবিধা দ্বিগুণ, তার পরও প্রত্যাখ্যান মালিকদের

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ২২:৫০

এখন থেকে এ খাতের কারখানাগুলো বেসিক নিট কাপড় তৈরিতে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ, বিশেষ আইটেমে ৩০ শতাংশ এবং সোয়েটার ও মোজায় ৪ শতাংশ হারে অপচয় সুবিধা পাবে। নিট পোশাকশিল্প মালিকরা সরকারের নতুন এই ওয়েস্টেজ রেট প্রত্যাখ্যান করেছেন।

দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত নিট পোশাকে সুতা থেকে কাপড় তৈরি এবং কাপড় থেকে পোশাক তৈরিতে অপচয় সুবিধা বা ওয়েস্টেজ রেট প্রায় দ্বিগুণ করেছে সরকার।

এখন থেকে এ খাতের কারখানাগুলো বেসিক নিট কাপড় তৈরিতে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ, বিশেষ আইটেমে ৩০ শতাংশ এবং সোয়েটার ও মোজায় ৪ শতাংশ হারে অপচয় সুবিধা পাবে।

রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

তবে নিট পোশাকশিল্প মালিকরা সরকারের নতুন এই ওয়েস্টেজ রেট প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ খাতের রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রোববার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই রেট মানি না। কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ অপচয় সুবিধা চাই আমরা।’

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। এতে রপ্তানি না বেড়ে বাধাগ্রস্ত হবে।’

‘নতুন এই হার কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়’ উল্লেখ করে হাতেম বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছে, ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অপচয় হয়। তাহলে তারা কীভাবে ২৭/৩০ শতাংশ হার নির্ধারণ করে আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’

সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অফিশিয়ালি চিঠি দিয়ে এই ওয়েস্টেজ রেট প্রত্যাখ্যান করা হবে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে অপচয় সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন এ খাতের উদ্যোক্তা। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে অপচয় সুবিধা নির্ধারণ করা হয়। তখন সব ক্ষেত্রেই ১৬ শতাংশ অপচয় সুবিধা দেওয়া হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রোববারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ট্রাউজার, শর্টস, স্কার্ট, পাজামা এবং এ-জাতীয় পোশাকে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ অপচয় সুবিধা পাবেন শিল্পমালিকরা।

নিটিং পর্যায়ে ১ শতাংশ, ডায়িং ও ফিনিশিং পর্যায়ে ৯ শতাংশ, কাটিং পর্যায়ে ১৩ শতাংশ, প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি, সেলাই, ধোয়া এবং ফিনিশিং ও ইনস্পেকশন পর্যায়ে ১ শতাংশ করে অপচয় সুবিধা পাবে কারখানাগুলো।

রমপার্স, ট্যাঙ্ক টপ, গাউন, হুডি, লিংগারির মতো বিশেষায়িত পোশাকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অপচয় সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের পোশাকের নিটিংয়ে ২ শতাংশ, ডায়িং ও ফিনিশিংয়ে ৯ শতাংশ, কাটিংয়ে ১৫ শতাংশ, প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি, সেলাই, ধোয়া এবং ফিনিশিং ও ইনস্পেকশন পর্যায়ে ১ শতাংশ করে অপচয় সুবিধা পাবে কারখানাগুলো।

সোয়েটার, জাম্পার, পুলওভার, কার্ডিগান, ভেস্ট, মোজা, গ্লাভসসহ এ ধরনের পোশাকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ অপচয় সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের পোশাকের নিটিংয়ে ২ শতাংশ অপচয় সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া লিংকিং, ওয়াশিং ও ফিনিশিংয়ে ১ শতাংশ এবং ইনস্পেকশনে ১ শতাংশ হারে অপচয় সুবিধা পাওয়া যাবে।

নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন যদিও এই সুবিধা বাড়িয়ে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছিল।

অপচয় সুবিধা বাড়ায় রপ্তানিকারকরা এখন একই পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিনা শুল্কে দেশ-বিদেশ থেকে এখনকার চেয়ে বেশি পরিমাণ সুতা ও ফ্যাব্রিক আমদানি করতে পারবে। কোনো কোম্পানির অপচয় নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হলে, তা খোলাবাজারে বিক্রি করে পোশাক কারখানা মালিক লাভবান হলেও দেশীয় সুতা ও ফ্যাব্রিক উৎপাদক কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্যদিকে, প্রকৃত অপচয় হারের তুলনায় সরকার নির্ধারিত হার কম হলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের বাড়তি যে পরিমাণ অপচয় হয়, তা খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কাঁচামাল অপচয় হয়েছে বলে ধরে নেয় কাস্টমস অডিট ডিপার্টমেন্ট। তখন বাড়তি অপচয় হওয়া কাঁচামালের ওপর সরকার নির্ধারিত শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

গত জানুয়ারিতে এই অপচয় হার বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

পরে প্রকৃত অপচয় হার বের করার জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০টি কোম্পানির কাছে অপচয় হার জানতে চেয়ে চিঠি দিলে দুটি কোম্পানি তার জবাব দেয়। ৪০ শতাংশের বেশি অপচয় হয় বলে তারা জানায়।

পরে প্রকৃত অপচয় হার কতো- তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি বেসিক নিটওয়্যার, স্পেশালাইজড আইটেম এবং সোয়েটার ও মোজা উৎপাদন করে এমন দুটি করে মোট ছয়টি কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়।

সুতা থেকে তৈরি পোশাক উৎপাদন পর্যন্ত কারখানায় ব্যবহৃত প্রযুক্তির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন হারে অপচয় হয়ে থাকে। একই ধরণের কারখানায় অপচয় হার গড় করে তারা সর্বোচ্চ অপচয় রেট নির্ধারণের সুপারিশ করে।

ওই সুপারিশের আলোকেই নিট পোশাকের জন্য নতুন অপচয় সুবিধা বা ওয়েস্টেজ রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিভাগের আরো খবর