রাজধানীতে গাড়িচাপায় বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং গুরুতর আহতের ঘটনায় করা মামলার নিষ্পত্তিতে কোনো ধরনের গাফিলতি হলে শাহবাগে গণ-আদালত গঠনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
রোববার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে লেখক ও প্রকাশক রবিন আহসান এ হুঁশিয়ারি দেন।
আদিবাসী মনোরঞ্জন হাজংয়ের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। রবিন আহসান মানববন্ধনের সঞ্চালক ছিলেন।
রবিন আহসান বলেন, পুলিশ তার বাহিনীর একজন সদস্যের মামলা নিতে ১৫ দিন সময় নিয়েছে। কী অপদার্থ একটি রাষ্ট্র তারা গড়ে তুলেছে। এই লজ্জা আপনারা কোথায় রাখবেন? রবিন আহসান পুলিশ সদস্যদের মহুয়া সার্জেন্টের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
গত ২ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বনানীতে গাড়িচাপায় মারাত্মক জখম হন বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা।
বাবা মনোরঞ্জন হাজংয়ের সঙ্গে ট্রাফিক সার্জেন্ট মহুয়া হাজং। ছবি: সংগৃহীত
যে গাড়িটিকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে, তা চালাচ্ছিলেন একজন বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসান।
মনোরঞ্জন হাজং আহত হওয়ার ঘটনায় তার মেয়ে সার্জেন্ট মহুয়া বনানী থানায় মামলা করতে গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে নেয়া হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হলে ঘটনার দুই সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার মামলাটি নেয় পুলিশ।
সড়ক পরিবহন আইনের এই মামলায় গাড়ির চালকসহ অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে মামলার দুই দিন আগেই নেয়া হয় অভিযুক্ত গাড়িচালকের জিডি। সেখানে বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসান দুর্ঘটনার জন্য উল্টো দায়ী করেছেন মনোরঞ্জন হাজংকে।
দুর্ঘটনায় আহত মনোরঞ্জন হাজংয়ের ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। বাম পাও ক্ষতিগ্রস্ত। তাকে প্রথমে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হলেও পরে বারডেমে স্থানান্তর করা হয়। তিনি সেখানে আইসিইউতে আছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘প্রান্তিক হাজং জনগোষ্ঠী বলেই কি মহুয়ার প্রতি এই আচরণ করা হচ্ছে? বিচারপতি একজন এলিট, সমাজের ওপরতলার বাসিন্দা। হাজংরা তলানিতে থাকেন বলে তারা বিচার পান না। এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর একটি বৈষম্য। এই বৈষম্যের ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে গরিব, আদিবাসী, প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিচারের জায়গাটি বন্ধ করা হচ্ছে।’
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আইন সবার জন্য একই হওয়া উচিত। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে এবং ঘটনার এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে যেন মানুষ মনে করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি আদালত আছে, বিচারব্যবস্থা আছে, যার থেকে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, সার্জেন্ট মহুয়ার বাবা বিজিবির সাবেক সৈন্য মনোরঞ্জনের ডান পা কাটা গেছে, বাম পায়ের অবস্থাও ভালো নয়। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন, কিন্তু অপরাধী বিচারপতির ছেলে হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো দূরের কথা, মামলাই নেয়া হচ্ছে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করব।
দীপায়ন খীসা নামে একজন হাজং অধিবাসী বলেন, রাষ্ট্রীয় সাধারণ নিয়ম যিনি অন্যায় করবেন তিনি গ্রেপ্তার হবেন এবং বিচারের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র তার মামলা নিতে গড়িমসি করেছে। আসলে ক্ষমতার কাঠামোয় সমস্যা। যার বিরুদ্ধে মামলা তিনি ক্ষমতার উচ্চপদে আছেন আর অভিযোগকারীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাই তাদের প্রতি এই অবহেলা।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আকরাম হোসেন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মাসুম বক্তব্য রাখেন।