ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী হত্যা মামলায় স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ফের দুই দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
রোববার ঢাকার মহানগর হাকিম আরাফাতুল রাকিবের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেয়।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পুলিশের উপপরিদর্শক সালাউদ্দিন মোল্লা তিন দিনের রিমান্ডফেরত আসামিকে আদালতে হাজির করে পুনরায় পাঁচ দিনের হেফাজতে নিতে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, তিন দিনের রিমান্ডে পেয়ে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আসামি চতুরতার সঙ্গে ঘটনার নানা বিষয় গোপন করে যাচ্ছে। ঘটনায় জড়িত পলাতক দুই আসামির বিষয়ে তথ্য ইফতেখার সুকৌশলে গোপন করে যাচ্ছেন।
এতে বলা হয়, এই মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। সারা দেশে মামলাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ ও আসামিদের শাস্তির দাবি করা হয়েছে। এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। তাই আসামিকে আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তার এবং ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
এ জন্য ফের তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার প্রার্থনা করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
প্রথমে বনানী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, ‘এ মামলার ভিকটিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী। তিনি অমানবিক নিষ্ঠুর ও নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আসামিরা ভিকটিমকে পড়াশোনা বন্ধ করতে বলেছিল। ভিকটিম তার পড়াশোনা বন্ধ করতে রাজি না হলে প্রথমে তার চুল কেটে দেয়া হয়। এরপরও ভিকটিম পড়ালেখা চালিয়ে যান। বন্ধুবান্ধব থেকে এড়িয়ে গিয়ে অনেকটা চুপচাপ হয়ে যান।
উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এই আসামি কানাডা থেকে আসেন। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে অন্য আসামিদের সঙ্গে নিয়ে ভিকটিমকে হত্যা করেছেন। কে, কীভাবে হত্যার কাজে সহায়তা করেছেন সেটি জানার জন্য আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউর মো. শামসুর রহমান বলেন, ‘শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এলমার মতো একজন নিষ্পাপ মেধাবী ছাত্রীকে আঘাত করা হয়নি। এমনভাবে টর্চার করে এলমাকে হত্যা করা হয়েছে যা বর্ণনা করার ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন।’
আসামির পক্ষে আইনজীবী জিল্লুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
তিনি বলেন, ‘এ আসামি তিন দিনের রিমান্ডে ছিলেন। আবার তার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর আসামি কানাডা থেকে দেশে আসেন। ঘটনার দিন ১৪ ডিসেম্বর শাশুড়িকে ফোনে এলমার অসুস্থতার বিষয়টি জানান। আসামি যদি তার স্ত্রীকে মেরে ফেলত তাহলে কি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেত? এমন কিছু করলে তো তিনি লাশ ফেলে পালিয়ে যেতেন।’
আইনজীবী জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছেন রুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করা হয়েছে। আসামি যদি তাকে হত্যা করত তাহলে দরজা ভেতর থেকে আটকালো কে? আর আসামি ১৫ তারিখ থেকে পুলিশ কাস্টডিতে। এ অবস্থায় তার আব্বা-আম্মা কোথায় আছেন তা তিনি কেমন করে জানবেন? হাজারবার মারলেও সে কিছু বলতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘হয়রানি ও নির্যাতন করার জন্য আবার তার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ইফতেখার তার স্ত্রীকে বিদেশে নিতে সাত লাখ টাকা দিয়েছেন। স্ত্রীকে বিদেশে নিয়ে যেতেই তিনি দেশে এসেছেন। তাই তিনি কেন নিজের স্ত্রীকে হত্যা করবেন? বরং তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ অবস্থায় রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘ভিকটিম তার কাস্টডিতে ছিলেন। তিনি কেমনে মারা গেলেন তা আসামি কেন জানেন না? এমনকি তার নিজের উপস্থিতিতে বাড়িতে কী ঘটেছে তারা নাকি কেউ কিছুই জানেন না। আসামিরা তাকে হত্যা করেছেন। এ অবস্থায় আসামির রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ইফতেখারের ফের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
গত ১৫ ডিসেম্বর এই আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী এলমা চৌধুরী। তার সারা শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন এলমার সহপাঠীরা।
তবে এলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এলমাকে প্রথমে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় এলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীন, শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আমিন ও শাশুড়ি শিরিন আমিনকে আসামি করা হয়।