র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
রোববার রাজধানীর বিটিএমসি ভবনে বর্তমান কমিশনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন কমিশনের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরা কখনোই সমর্থন করি না। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অবশ্যই ভূমিকা পালন করে এবং করবে। সেটা যে সংস্থাই করুক।’
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখন অতীতের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে যে, এ ধরনের একটা অবস্থান থাকতে পারে।’
র্যারেব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে বিভ্রান্তিকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বলা হচ্ছে ৪০০-৬০০ অভিযোগ। যাকে আমরা মনে করি কনফিয়ুজিং (বিভ্রান্তিকর)। সুস্পষ্টভাবে যদি প্রত্যেকটা অভিযোগের বিষয়ে বলা হয় তখন আমরা খতিয়ে দেখতে পারি কে এটা বলেছেন এবং কেন বলেছেন?’
তিনি বলেন, ‘র্যাব প্রতিষ্ঠত হয়েছিল ২০০৪ সালে। আজকে এত বছর পর…অতীতে যদি আপনার দেখেন তাহলে র্যাবের কর্মকাণ্ড সর্ম্পকে অন্য সময় কিন্তু অনেক বেশি অভিযোগ এসেছিল। তখন তো এ ধরনের (নিষেধাজ্ঞা) কিছু করা হয়নি। এখন যখন করা হলো, তখন আমাদের ধারণা হলো এ ধরনের (রাজনৈতিক উদ্দেশ্য) কিছু কি না?
এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের অবস্থান ব্যাখা করবে বলেও জানান তিনি।
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখার জন্য অপেক্ষায় আছি। যখন আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাব তখন আমরা আমাদের অবস্থান আবারও ব্যাখা করব।’
এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা চেয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান আইন অনুযায়ী আমরা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রতিবেদন চাইতে পারি, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারি না। আইন সংশোধন হলে আমরা এই ক্ষমতা পাব।’
বর্তমান কমিশনের সাফল্য তুলে ধরে নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমাদের সময়ে ৮২ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে, যা অতীতের চেয়ে কোনো সময়ের চেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করি।’
বর্তমান কমিশন কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নাছিমা বেগম বলেন, ‘আগের কমিশন (ড. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে) কী করেছে, আমরা কী করেছি আপনার তুলনা করলেই দেখতে পারবেন।’
এ সময় তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ড. মিজানুর রহমান খানের সাক্ষাতকারেরও সমালোচনা করেন।
নাছিমা বেগম বলেন, ‘আগের চেয়ারম্যান মহোদয় বলেছেন এ কমিশন আমলা দিয়ে ভরে গেছে। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন আমলা হওয়া কি অপরাধ?’
তিনি বলেন, ‘আমলাদের মন আছে, বিবেক আছে, বিচার-বুদ্ধি আছে। বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কমর্কতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগ আলাদা আলাদা করে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক তথা আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মুস্তফা সরওয়ার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও আনোয়ার লতিফ খান এবং বাহিনীটির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ।
র্যাবের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দেখভালের জন্য সরকারের তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।