ঢাকা নগর পরিবহন সেবা শুরু হতে যাচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর। প্রথমে ৫০টি বাস দিয়ে দেয়া হবে এ সেবা।
কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত যাবে এ পরিবহনের বাস।
পরিবহন সেবায় যুক্ত হতে আটটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে বিআরটিসিসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে রোববার বিকেল ৩টায় বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির ২০তম সভা শুরু হয়।
সভা শেষে বিকেল পৌনে ৫টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রদ্বয় সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন।
ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বাস র্যাশনালাইজেশনের ২০তম সভা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ঢাকাবাসীকে সুখবর দিতে চাই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিজয়ের এ মাসে আমরা ঢাকাবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম শৃঙ্খলাবদ্ধ গণপরিবহন ব্যবস্থার, সেই লক্ষ্যে আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে করোনা মহামারির মধ্যে কাজ করে চলেছি।
‘সেটার একটা তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজয়ের মাসে উপহার হিসেবে ঢাকাবাসীর জন্য ২৬ ডিসেম্বর সূচনা করতে যাচ্ছি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঢাকা নগর পরিবহন সেবা। ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে সাইনবোর্ড, কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে এই বাস।’
তিনি বলেন, ‘এই যাত্রাপথ আমরা নমুনা হিসেবে শুরু করব। মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি সরাসরি না পারলেও ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের শুভ উদ্বোধন করবেন। ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় শুভ উদ্বোধন করা হবে।’
বাস কোম্পানির সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করেছিল আটটি প্রতিষ্ঠান। সেই আটটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছি চারটি প্রতিষ্ঠানকে। এ ছাড়া বিআরটিসিসহ মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে।’
বাসের সংখ্যা উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, ‘সব মিলিয়ে ১০০টি বাস দিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি। ট্রান্সসিলভার ২০টি বাসের সম্মতি দিয়েছি। আরেকটি প্রতিষ্ঠান মোস্তফা হেলাল কবিরের। তারা ছয়টির জন্য আবেদন করেছিল। তাদের পাঁচটি বাসের সম্মতি দেয়া হয়েছে। জাহান এন্টারপ্রাইজ ১০০ বাসের জন্য আবেদন করেছিল, তাদেরকে ৬০টি বাসের সম্মতি দেয়া হয়েছে। এইচআর এন্টারপ্রাইজ পাঁচটি বাসের জন্য আবেদন করেছিল। তাদের পাঁচটি বাসের সম্মতি দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯০টি বাস। এ ছাড়া বিআরটিসির জন্য ১০টি বাস নির্ধারিত থাকবে। এভাবে ১০০টি বাস নিয়ে যৌথ মূলধনের অংশীদারত্ব চুক্তি হবে।
‘তবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর আমরা ট্রান্সসিলভার ২০টি বাস এবং বিআরটিসির পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০টি ডাবল ডেকার বাস—এটা দিয়ে সূচনা করব। বাকি কার্যক্রম ৬০ দিবসের মধ্যে পূর্ণভাবে এই যাত্রাপথ বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী। এই যাত্রাপথের সাথে সংশ্লিষ্ট গ্রিন ক্লাস্টার। এই গ্রিন ক্লাস্টারের কার্যক্রম শুরু করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
অন্যান্য বাসের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা যাতে তাদের সমন্বয় করতে পারি। আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এক একটি নতুন বিনিয়োগকারী নেব এবং নতুন বাস দিয়ে সেগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করব।’
নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির ২০তম সভা
১ হাজার ৬৪৬টি অনুমোদনহীন বাস চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘এই বাসগুলো আর কোনো দিন ঢাকায় চলবে না। ইতিমধ্যে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে ২৯টি বাস জব্দ করা হয়েছে। বাকিগুলো যেখানেই পাওয়া যাবে এগুলোকে ধ্বংস করা হবে। এই যাত্রাপথে যাদের রোড পারমিট ছিল তাদেরকে গ্রিন ক্লাস্টারের বাইরে অন্য যাত্রাপথে সমন্বয় করে দেব। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এই কাজ সমন্বয় করে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রান্সসিলভার ২০টি নতুন বাস আনা হবে। বিআরটিসির ৩০টি বাস নতুন নয়। এগুলো মেরামত করে আনা হবে। এই যাত্রাপথে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যাত্রী ছাউনি, বাস বে নির্মাণ চলছে এবং ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
‘২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ হবে। এই বাসগুলো নির্ধারিত যাত্রী ছাউনি ও বাসস্ট্যান্ড ছাড়া থামবে না।’
ই-টিকেটিং
নগর পরিবহন সেবায় ই-টিকেটিং থাকবে জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ রুটে যারা থাকবে প্রত্যেকটা বাসের রেজিস্ট্রেশন থাকবে, রুট পারমিট থাকবে এবং ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকবে। ড্রাইভারদের সবুজ রঙের পোশাক থাকবে এবং তারা আইডি কার্ড পরিহিত থাকবে। এই সেবা হবে ই-টিকিটিং।
‘অনুমোদনহীন বাস ও রুট পারমিট ছাড়া বাসগুলোকে জব্দ করা হবে। মাতুয়াইলে একটি ডাম্পিং স্টেশন করা হচ্ছে। এই বাসগুলোকে সেখানে নিয়ে ফেলা হবে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’
বাসমালিকদের অসহযোগিতার কারণে নগর পরিবহন নামাতে দেরি হয়েছে বলে জানান মেয়র আতিক।
তিনি বলেন, ‘আগে যে ভাড়া ২টা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটাই থাকবে।’