আবারও বড় পতন হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। টানা পতনের পর গত সপ্তাহের বুধবার সূচক ৩০ পয়েন্ট বাড়ার পর রোববার আবারও সেই পতনে পুঁজিবাজার। সূচক কমেছে ৮৪ পয়েন্ট।
গত বৃহস্পতিবার মহান বিজয় দিবসের সরকারি ছুটি ছিল। তার আগের দিন বুধবার সূচক বেড়েছিল। যদিও গত সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় পতনেই ছিল সূচক।
বুধবার সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগাকরীদের প্রত্যাশা ছিল চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন ভালো যাবে পুঁজিবাজার। লেনদেনের শুরুর প্রথম কয়েক মিনিট সেই ধারাতেই ছিল সূচক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার বিক্রির চাপে উত্থানের পতন শুরু হয়।
বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে সূচকের সেই পতন আর উত্থানে ফেরেনি। ফলে দিন শেষে মাত্র ৮৭টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। কমেছে ২৬৬টি কোম্পানির।
এর আগের বড় পতনের পরিসংখ্যান বলছে ৭ নভেম্বর সূচক পড়েছে ৫১ পয়েন্ট। ১২ নভেম্বর কমেছে ৬৪ পয়েন্ট। ১৪ নভেম্বর কমেছে ৬৫ পয়েন্ট। ২১ নভেম্বর ৬ পয়েন্ট কমলেও ২৮ নভেম্বর কমেছে ৭৯ পয়েন্ট।
লেনদেনেও ভাটার টান দেখা গেছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন আট মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এলেও রোববার তা আরও কমেছে। এদিন লেনদেন হয়েছে ৭৮৬ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহের বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৮০৭ কোটি টাকা। রোববার যে লেনদেন হয়েছে তা গত ১০ ফেব্রুয়ারির সমান। সেদিনও লেনদেন হয়েছে ৭৮৬ কোটি টাকা।
এদিন সূচকের পতনে ব্যাংক, বস্ত্র, প্রকৌশলের মতো প্রধান খাতগুলোয় ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ফলে সূচকে এর প্রভাব পড়েছে।
সূচক পতনে এদিন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি), যার ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ ছাড়া টেলিকম খাত রবির শেয়ারদর ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, লাফার্জ হোলসিম, আইসিবি, বেক্সিমকো ফার্মাসহ আটটি কোম্পানির শেয়ারের দর পতনে সূচক কমেছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর খবরে এদিনও ৪ শতাংশের বেশি শেয়ারদর বেড়েছে ছয়টি কোম্পানির। এর মধ্যে সোনালী পেপারের শেয়ারদর বেড়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের শেয়ারদর বেড়েছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ারদর বেড়েছে ৫ শতাংশ।
এ ছাড়া জিলবাংলা সুগার, সাভার রিফ্যাক্টরিস, পেপার প্রসেসিং কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
দর বৃদ্ধিতে ১০ কোম্পানি
এদিন দিনের সর্বোচ্চ দর বেড়েছে বিমা খাতের ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার দর বুধবার কমলেও তার আগে দুই কর্মদিবস বেড়েছিল। রোববার দিনের সর্বোচ্চ দরে এসে ১০৮ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ১১৮ টাকা ৮০ পয়সায়। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৭ রাখ ৮৩ হাজার ৯৫৫টি।
দর বৃদ্ধিতে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সসহ পর পর তিনটি কোম্পানি ছিল বিমা খাতের। এ ছাড়া এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯৫ শতাংশ।
৯ শতাংশের বেশি শেয়ার দর বৃদ্ধি পাওয়া আরও দুটি কোম্পানি ছিল, যার একটি বিবিধ খাতের খান ব্রাদার পিপি ওভেন কোম্পানি। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৫২ শতাংশ আর প্রকৌশল খাতের সুহিৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৩০ শতাংশ।
দর বৃদ্ধিতে ছিল সোনালী পেপার, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৪৯ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৩ লরাখ ৬ হাজার ১৯টি।
রেনউইক যজ্ঞেশ্বর কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৬.২৫ শতাংশ। প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৯৫ শতাংশ।
ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের শেয়ার দর ৩ হাজার ১৮০ টাকা থেকে ৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৯ টাকা ২০ পয়সা। এ ছাড়া, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৪.৮৪ শতাংশ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের সবশেষ চিত্র
দর পতনের ১০ কোম্পানি
টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পতনের থাকা এসএস স্টিলের শেয়ার দর কমেছে ৮.৪১ শতাংশ। শেয়ার দর ২১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৯ টাকা ৬০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, হাতবদল হয়েছে ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮১টি শেয়ার।
মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার দর কমেছে ৮.২২ শতাংশ। শেয়ার দর ১৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা।
এরামিট সিমেন্টের শেয়ার দর কমেছে ৬.৯৮ শতাংশ। শেয়ার দর ৪০ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৭ টাকা ৩০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৪৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। ফরচুন সুজের শেয়ার দর কমেছে ৬.৫৩ শতাংশ।
বীচ হ্যাচারির শেয়ার দর কমেছে ৬.১৭ শতাংশ। আজিজ পাইপের শেয়ার দর কমেছে ৫.৯৯ শতাংশ। গত চার কার্মদিবস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে আজিজ পাইপের শেয়ার দর। গত দশ কর্মদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির ছয়দিন শেয়ার দর বেড়েছে।
এছাড়া, মেঘনা পেটের শেয়ার দর গত কর্মদিবসে বাড়লেও রোববার কমেছে ৫.৯৬ শতাংশ। শেয়ার দর ২১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৫৪ হাজার ৯০০টি।
এপেক্সফুডের শেয়ার দর কমেছে ৫.৮৩ শতাংশ। সোনালী পেপারের শেয়ারে দর কমেছে ৫.৪৮ শতাংশ। এপেক্স স্পিনিংয়ের শেয়ার দর কমেছে ৫.৩৭ শতাংশ।
লেনদেনে সেরা ১০ কোম্পানি
এদিন লেনদেনে এগিয়ে থাকা ১০ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা লেনদেন হাতবদল হয়েছে ৪৭ লাখ ৭৮ হাজার ২০৯টি শেয়ার। এছাড়া ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৬৪টি। ব্যাংকটির শেয়ার দর গত সাত কর্মদিবস ধরে কমছে।
সোনালী পেপারের লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৩০ লাখ ৬ হাজার ১৯টি। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৫ শতাংশ। গত ৫ কর্মদিবস ধরে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ছে।
ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬৩টি।
একটিভ ফাইনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৯টি।
সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৮ রাখ ৯৬ হাজার ৮১১টি।
এছাড়া ব্যাংক খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের ১৫ কোটি ৬ লাখ, বিএটিবিসি’র ১৪ কোটি ৯৪ লাখ, জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৭ লাখ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।