দর্শক খরায় একের পর এক সিনেমা হল যেখানে বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছিল তখন বগুড়ায় চালু হয়েছে মধুবন সিনেপ্লেক্স। ভালো পরিবেশ পাওয়ায় এরই মধ্যে সিনেপ্লেক্সে দর্শক ভিড় করছেন। তাই ঢাকার বাইরে দ্বিতীয় এ সিনেপ্লেক্স নিয়ে আশার আলো খুঁজে পেয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
উত্তরাঞ্চলে প্রথম সিনেপ্লেক্স বগুড়ার মধুবনে ক্রমাগত দর্শক বাড়ছে। কাহিনি নির্ভর ও সুস্থ ধারার সিনেমা দেখতে আগ্রহী এখানকার দর্শক। এ ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশ হওয়ায় দিন দিন দর্শক বাড়ছে বলে জানিয়েছে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের চেলোপাড়ায় অবস্থিত শহরের পুরোনো হলটির বাইরের চেহারা যেমন বদলেছে, তেমনি ধুলা ভরা সেই আসনগুলোও পেয়েছে নতুন সজ্জা।
নবরূপে পর্দা ভরে উঠেছে রঙিন আলোয়, নতুন সাউন্ড সিস্টেমে গমগম করে উঠেছে হলের ভেতরটা। বড় পর্দার সিনেমার ভুবনে দর্শকের সাড়াও মিলেছে বেশ।
সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট এ এম ইউনুস ১৯৭৪ সালে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায় মধুবন সিনেমা হলটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন হলটিতে বসে, দাঁড়িয়ে একসঙ্গে এক হাজার দর্শক সিনেমা উপভোগ করতেন। বাবার সঙ্গে এ হলের দেখাশোনা করতেন আর এম ইউনুস রুবেল।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমা প্রদর্শনের পর আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনসহ নানা কারণে হলের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর রুবেল মধুবন সিনেপ্লেক্স সংস্কারের উদ্যোগ নেন। সাড়ে তিন বছর কাজ শেষে প্রদর্শনের উপযোগী হয় সিনেপ্লেক্সটি।
এ আধুনিক সিনেপ্লেক্সে আসন সংখ্যা ৩৪৫। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেম, নান্দনিক পরিবেশ, বিশ্বমানের প্রেক্ষাগৃহের অত্যাধুনিক সব সুবিধা যোগ হয়েছে হলটিতে। দর্শক আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারছেন।
৪২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২২ ফুট প্রস্থের থ্রিডি পর্দায় সিনেমা দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রতি শুক্রবার তিনটি ও অন্য দিনে চারটি শো প্রদর্শিত হচ্ছে। নারী দর্শকের জন্য রয়েছে প্রসাধন কক্ষ। পুরুষদের জন্য আলাদা বিশ্রামাগার, ফুডকোর্ট, জুসবার, কফিশপ ও পার্কিং সুবিধা রয়েছে।
বর্তমানে সিঙ্গেল স্ক্রিনে প্রদর্শন শুরু হলেও পরে এর সংখ্যা বাড়বে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ১৫ অক্টোবরে ভারতের জিৎ ও মিমি চক্রবর্তী অভিনীত ‘বাজি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে মধুবন সিনেপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত দ্য গার্ডিয়ান, পদ্মা পুরান, রেহেনা মারিয়াম নুর, নোনা জলের কাব্য সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। বর্তমানে ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমা চলছে।
জানা গেছে, এর মধ্যে ৪টি সিনেমাই ভালো ব্যবসা করেছে। সিনেমা দেখতে সব বয়সী দর্শক ভিড় করছেন সিনেপ্লেক্সে। তিন ধরনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে এখানে। গোল্ড টিকিটের দাম ৩০০ টাকা, প্রিমিয়াম ২০০ টাকা এবং স্ট্যান্ডার্ড টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে।
মধুবন সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে আসা শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আগের চেয়ে হলের পরিবেশ এখন অনেক ভালো, দৃষ্টিনন্দন ভবনে ও সুস্থ ধারার সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে সিনেপ্লেক্সে। হলে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তাই আবার আসব দেখতে। ভালো কাহিনির সিনেমা নির্মাণ করা হলে অনেকেই আসবে সিনেমা দেখতে।’
আরেক দর্শক রোকসানা খাতুন জানান, ‘মধুবন সিনেপ্লেক্সে এখন নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে নিরাপত্তার সঙ্গে সিনেমা দেখতে পাচ্ছি। এমন পরিবেশ আগে এখানকার কোনো হলে ছিল না। বর্তমানে যে সিনেমা চলছে তা পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দেখা যায়।’
মধুবন সিনেপ্লেক্সের পরিচালক এস এম ইউনুস রোহান জানান, সিনেমা প্রদর্শনের প্রথম দিন থেকে দর্শকের ব্যাপক সাড়া ও উপস্থিতি বাড়ছে। সিনেপ্লেক্সে ৬টি সিনেমার মধ্যে ‘রেহেনা মারিয়াম নুর’ সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। শিগগির চালু হবে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা।
বর্তমানে একটি স্ক্রিনে প্রদর্শিত হলেও পরবর্তী সময়ে মাল্টিপ্লেক্সে রূপান্তর করা হবে। তিনতলা ভবনের নিচতলায় থাকছে ফুডকোর্ট এবং ওপর তলায় আধুনিক সিনে থিয়েটার। যান পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা রয়েছে হলের পাশে।
রোহান বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সের দর্শককে আমরা অতিথি হিসেবে দেখছি। সিনেপ্লেক্স চত্বর ও এর বাইরে প্রায় ৩২টি সিটি ক্যামেরা দ্বারা নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মধুবন সিনেপ্লেক্সে সুস্থ ধারার হিট সিনেমা চালাতে পারলে দর্শক আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’